পাথরকুচি পাতার রস খেলে কি হয়? বিস্তারিতও জেনে নিন

পাথরকুচি পাতার রস খেলে কি হয়, এ বিষয়টি সম্পর্কে আপনারা যারা জানেন না তারা আজকের এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিতে পারেন। কারণ এই বিষয়টি সম্পর্কে জানলে আপনার শরীরের জন্য কি কি উপকার হবে তার সঠিকভাবে জানতে পারবেন। তাই আর দেরি না করে এই আলোচনার মাধ্যমে জেনে নিন।
পাথরকুচি পাতার রস খেলে কি হয় বিস্তারিত জেনে নিন
পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও জানা গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ বিষয়টিও এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। তাই আসুন আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

পাথরকুচি পাতার রস খেলে কি হয়

পাথরকুচি পাতার রস খেলে কি হয় তা জানার জন্য আজকের এই আলোচনায় চোখ রাখুন। কারণ পাথরকুচি পাতা আমাদের শরীরের জন্য কি কি উপকার হয় তা হয়তো অনেকেই জানেন না। এই পাথরকুচি পাতা সে প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন মহা ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। 
তবে এই পাথরকুচি পাতার রস খাওয়ার ফলে মানুষের শরীরে কি কি সমস্যা দূর হয় তা আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে। তাই আর দেরি না করে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
  • অনেক বাচ্চাদের পেট ব্যথা হয় তখন বিভিন্ন প্রন্থা অবলম্বন করে বাচ্চার পেট ব্যথা দূর করা হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন ৩০ থেকে ৬০ ফোটা পাথরকুচি পাতা রস পেটে মালিশ করলে বাচ্চাদের পেট ব্যথা দ্রুত উপশম হয়।
  • এছাড়াও পাথরকুচি পাতার রস খাওয়ার ফলে কিডনি এবং গলগণ্ডের পাথর অপসারণ করতে বেশ সাহায্য করে। যদি আপনারা দিনের মধ্যে দুইবার পাথরকুচি পাতার দুই থেকে তিন টুকরা অথবা রস খেতে পারেন তাহলে কিডনি এবং গলগণ্ডের পাথর খুব সহজেই অপসারণ হয়ে যাবে।
  • শুধু তাই নয় যাদের সর্দি জনিত সমস্যা রয়েছে অর্থাৎ সর্দি-জনিত কারণে শরীরের যে কোন স্থানে ফোড়া দেখা দেয় তাহলে সে ক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার রস এক চামচ করে প্রতিদিন সকালে এবং বিকেলে খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যাবে। তবে মনে রাখবেন এভাবে এক সপ্তাহ খেলে তার পরেই উপকার পাবেন।
  • অনেক মানুষের প্রস্রাব আটকে যাওয়ার, পেট ফুলে যাওয়ার, পেটে বায়ুর চাপ এগুলো সমস্যা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে আপনারা চাইলে পাথরকুচি পাতার রস গরম করে এবং তার সাথে সামান্য পরিমাণে চিনি মিশ্রণ করে এক কাপ পানি খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যাবে। তবে মনে রাখতে হবে হালকা কুসুম গরম করে খেতে হবে।
  • যাদের অনেক আগে থেকে সর্দি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার রস খুবই উপকারী। কারণ পুরনো সর্দি ভালো করতে বিশেষভাবে উপকারে আসে পাথরকুচি পাতার রস। পাথরকুচি পাতার রস এবং সামান্য পরিমাণে সোহাগা খৈ, একসঙ্গে মিশ্রণ করে প্রতিদিন সকালে এবং বিকেলে দুই চা চামচ করে দুইবার খেলে পুরনো সর্দি খুব দ্রুত সেরে যাবে এবং সর্বদা সর্দি কাশি থেকে খুব সহজেই রেহাই পাওয়া যাবে।
  • যদি কোন ব্যক্তির লিভারের সমস্যা থাকে তাহলে, এই ধরনের সমস্যা এড়াতে চাইলে তাজা পাথরকুচি পাতা চিবিয়ে অথবা জুস তৈরি করে খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
  • এছাড়াও যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে এবং সেটি নিয়ন্ত্রণের নিয়ে আসতে চাই তাহলে পাথরকুচি পাতা খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি মূত্রথলির সমস্যা থাকলেও সমাধান হয়ে যাবে।
  • যদি কোন বিষাক্ত পোকামাকড় কামড়ে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার রস হালকা করে আগুনে ছেঁক দিয়ে লাগারে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়।
  • যে সকল ব্যাক্তিদের পিত্তজনিত ব্যথায় রক্তকরণ হয় তাদের দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই দ্রুত এই রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে দুই বেলা এক চামচ করে পাথরকুচি পাতার রস দুইদিন খেলে আশা করি উপকার পাওয়া যাবে।
  • আবার যে সকল ব্যক্তিদের মৃগী রোগান্ত সমস্যায় ভুগেন তারাও চাইলে পাথরকুচি পাতার রস এক থেকে দুই ফোঁটা মুখে দিলে আরাম পেয়ে যাবে। সামান্য পরিমাণে পেটে গেলেই এই রোগের দ্রুত সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে।

পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক

পাথরকুচি পাতার যেমন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। যদি আপনারা পূর্বে পাথরকুচি পাতার রস খেলে কি হয় এ বিষয়টি সম্পর্কে জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাদের পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও জানা জরুরী।  
সবকিছুর যেমন সঠিক মাত্রা রয়েছে ঠিক তেমনি পাথরকুচি পাতারও সঠিক মাত্রা রয়েছে। যদি অতিরিক্ত মাত্রায় পাথরকুচি পাতা খাওয়া হয় তাহলে স্বাস্থ্যের জন্য খুবই বিপদজনক। তাই আসুন আর দেরি না করে পাথরকুচি পাতার ক্ষতিক বা পাথরকুচি পাতার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
  • যদি কেউ অতিরিক্ত মাত্রায় পাথরকুচি পাতা খায় তাহলে মুখের রুচি নষ্ট হয়ে যায় আর এর ফলে খাবারের প্রতি তেমন একটা গুরুত্ব থাকে না।
  • যদি আপনারা অতিরিক্ত মাত্রায় পাথরকুচি পাতা খেয়ে থাকেন, তাহলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে শুধু তাই নয় পাশাপাশি পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • যে সকল গর্ভবতী নারীরা রয়েছে তাদের জন্যও পাথরকুচি পাতা হতে পারে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এটি গর্ভবতী নারীদের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনোই পাথরকুচি পাতা খাওয়া উচিত নয়।
  • যে সকল ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন যাবত ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন তাদের পাথরকুচি পাতা সেবন করার ফলে ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আর এর ফলে আপনার শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • যারা পরিমাণ এর চেয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে পাথরকুচি পাতা খেয়ে থাকেন, তাদের ডায়রিয়াজ জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এটি খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • যদি আপনারা পাথরকুচি পাতা খেয়ে থাকেন তাহলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। আর এর ফলে আপনার শরীরে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • এছাড়াও যারা এলার্জিজনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা পাথরকুচি পাতা কখনোই মাত্রার বাইরে খাবেন না। এটা করে এলার্জির সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
  • পাথরকুচি পাতা খাওয়ার ফলে আপনার পিত্ত থলির সমস্যা বৃদ্ধি হতে পারে। তাই বুঝে শুনে খাবেন।

খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয়

পাথরকুচি পাতা আদিমকাল থেকেই বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন পাথরকুচি পাতা শরীরের জন্য কি কি উপকারে আসে। কিন্তু যারা জানেন না তারা অবশ্যই আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয় তা জেনে নিতে পারেন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত-
অনেক মানুষেরই বিভিন্ন কারণে শরীর জ্বালাপোড়া করে এই জ্বালা পোড়া করার কারণে অনেকেই বিভিন্ন ওষুধ বা অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে শরীরে জ্বালাপোড়া দূর করে কিন্তু কিছুদিন পর আবার আগের মতোই শরীর জ্বালাপোড়া করে। তবে যদি আপনি পাথরকুচি পাতার রস এবং আধা কাপ হালকা কুসুম গরম পানি নিয়ে একসঙ্গে মিশ্রণ করে খেতে পারেন তাহলে চিরতরে শরীরের জ্বালা পোড়া দূর করা সম্ভব হবে।

যারা কলেরা, ডায়রিয়া এবং রক্ত আমাশয় ভুগেন।তারা চাইলে পাথরকুচি পাতা এবং ঘি ও জিরা গুড়া একসঙ্গে মিশ্রণ করে কয়েকদিন সকালে খালি পেটে খেতে পারলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যাবে।

এছাড়াও যাদের কিডনিতে পাথর রয়েছে এবং পিত্তথলির সমস্যা রয়েছে তারা চাইলে পাথরকুচি পাতা খালিপেটে সেবন করতে পারেন। অনেক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা খালি পেটে পাথরকুচি পাতার রস কিংবা পাতা চিবিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। তাই আপনারা চাইলে পাথরকুচি পাতা খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারেন।

পাথরকুচি পাতার মূলের কাজ কি

পাথরকুচি পাতার যে মূল দেখা যায় সেটাকে মূলত বলা হয় পত্রাশয়ী মূল। মূলত পাথরকুচি পাতার মূলের কাজ হল নতুন উদ্ভিদের বংশবিস্তার করা। অনেকেই পাথরকুচি পাতার মূলের কাজ কি জানেন না সে ক্ষেত্রে তাদের জানিয়ে দেওয়ার জন্য এই আলোচনা করা হয়েছে। 

আশা করি আপনারা সকলেই পাথরকুচি পাতার রস খেলে কি হয় এবং পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে পূর্বে জানার পাশাপাশি পাথরকুচি পাতার মূলের কাজ কি তা সঠিকভাবে জানতে পেরেছেন।

পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম

পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম সমস্যা বা রোগের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং বিকেলে নিয়ম অনুসরণ করে পাথরকুচি পাতার রস অথবা সরাসরি চিবিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। 

শুধু তাই নয় শরীরের জ্বালাপোড়া দূর করতেও অনেক বেশি সাহায্য করবে। যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা দিনে দুইবার তিনটি করে পাতা চিবিয়ে অথবা রস করে খেতে পারেন। এতে করে অনেক বেশি উপকার পারেন।
এছাড়াও যদি আপনাদের প্রস্রাব আটকে যায় কিংবা পেট ফুলে যায় তাহলে সামান্য পরিমাণে পাথরকুচি পাতার রস বের করে পানিতে মিশিয়ে খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। যারা পাথরকুচি পাতার রস অথবা পাতা চিবিয়ে খেতে পারে না তাদের ক্ষেত্রে অন্য প্রন্থা রয়েছে।

প্রন্থাঃ- সবার প্রথমে ৮ থেকে ১০ টি পাথরকুচি পাতা ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে কুচি কুচি করে কেটে নিতে হবে। এরপরে দুইটা শুকনো মরিচ পোড়া এবং একটি পেঁয়াজ এবং চারটি ধনাপাতা ও দুটি কাঁচামরিচ একসঙ্গে কুচি করে পাথরকুচি পাতার সঙ্গে মিশ্রণ করতে হবে এবং সেখানে সামান্য পরিমাণে সরিষার তেল এবং প্রয়োজনমতো লবণ মিশ্রণ করে ভর্তা তৈরি করতে হবে। আর এই ভর্তা অনেকেই খুব সহজেই খেতে পারবে আর দ্রুত শরীরের বিভিন্ন সমস্যা খুব সহজেই দূর হবে।

পাথরকুচি পাতা কখন খেতে হয়

আমরা প্রায় সকলেই জানি যে কোন জিনিসের খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে ঠিক তেমনি পাথরকুচি পাতা কখন খেতে হয় তারও কিছু নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। আপনারা যে কোন সময় পাথরকুচি পাতার রস খেতে পারেন। 

তবে অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমাণ মত রস খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যাবে। যেমন আপনি যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পাথরকুচি পাতার রস খেতে পারেন তাহলে অনেক বেশি উপকার পাবেন। 
তবে যদি আপনারা অনেক বেশি উপকার পেতে চান, তাহলে রাতে ঘুমানোর আগে খেতে পারেন এসময় খেলে শরীরের অনেক বেশি উপকার হয়। তবে দুপুরে পাথরকুচি পাতার রস না খাওয়াই ভালো সকালে এবং সন্ধ্যার মুহূর্তে সেবন করায় প্রকৃতপক্ষে ভালো।

শেষ কথাঃ পাথরকুচি পাতার রস খেলে কি হয়

সম্মানিত পাঠক বৃন্দু আসসালামু আলাইকুম আশা করি আপনারা সকলেই ভাল আছেন। আপনারা যারা উপরে উল্লেখিত সম্পূর্ণ আলোচনা মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন তারা আশা করি পাথরকুচি পাতার রস খেলে কি হয় এবং পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। যদি আপনারা এই আলোচনা মাধ্যমে একটু উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই অন্যদের মাঝে আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন। আর যদি কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে যাবেন। (ধন্যবাদ)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪