বিড়াল পোষা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে? জেনে নিন

বিড়াল পোষা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবার বেশ নজর কাড়ে পোষা বিড়াল। মুসলিম উম্মাহদের নবি হজরত মুহাম্মদ (সঃ) বিড়াল খুব পছন্দ করতেন। তবে আধুনিককালে সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা রেস্টুরেন্টে যে পার্সিয়ান বিড়ালগুলো দেখা যায় সেগুলো ক্রয় করা কি হালাল? 
বিড়াল পোষা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে
আরও অনেকের মনে প্রশ্ন থেকে যায় ইসলামিক দৃষ্টিতে এটি কি পবিত্র প্রাণী? বিড়াল পোষা কি জায়েজ? এমন নানান প্রশ্নের উত্তর খুঁজবো আজ।

বিড়াল নিয়ে হাদিস

সবচেয়ে বেশি হাদিস লেখক আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বিড়াল খুব পছন্দ করতেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর মুহাম্মদ (সা:) তার নাম রাখেন আবদুর রহমান। একদা লোকসমাবেশের মধ্যে তার জামার ভেতর হতে বিড়াল বেরিয়ে আসলে নবীজি রসিকতার ছলে আবু হুরায়রা বা বিড়ালের পিতা বলে সম্বোধন করেন। এরপর হতে তিনি আবু হুরায়রা নামেই পরিচিতি লাভ করেন।

বিড়াল নিয়ে একাধিক সংখ্যক সহি হাদিস পাওয়া যায়। এ সকল হাদিস থেকে এটির পবিত্রতা সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। যেমন:-

আয়েশা (রা.) কতৃক বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুল ( সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

إِنَّهَا لَيْسَتْ بِنَجَسٍ إِنَّمَا هِيَ مِنَ الطَّوَّافِينَ
عَلَيْكُمْ

“বিড়াল অপবিত্র নয়। এরা তোমাদের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে।”

আয়েশা (রা.) আরও বলেন, “আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পানি দিয়ে অজু করতে দেখেছি।” [সুনানে আবু দাউদ: ৭৬]

অর্থাৎ,বিড়ালে উচ্ছিষ্ট পানি ব্যবহার করা জায়েজ যদি না মুখে নাপাকি না থাকে।

বিড়াল পোষাকে ইসলামে জায়েজ করা হয়েছে। অনেক সাহাবী এটি পুষতেন বলে জানা যায়। তবে বন্দী করে, না খেতে দিয়ে একে কষ্ট দিলে, ইসলামিক দৃষ্টিতে বড় ধরনের গুনাহর শামিল। বিড়ালের খাবার দেওয়া সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত আছে,

আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

عُذِّبَتِ امْرَأَةٌ فِي هِرَّةٍ سَجَنَتْهَا حَتَّى مَاتَتْ، فَدَخَلَتْ فِيهَا النَّارَ، لاَ هِيَ أَطْعَمَتْهَا وَلاَ سَقَتْهَا، إِذْ حَبَسَتْهَا، وَلاَ هِيَ تَرَكَتْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الأَرْضِ.

“জনৈক নারীকে একটি বিড়ালের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সে বিড়ালটি বন্দি করে রাখে, এ অবস্থায় সেটি মারা যায়। সে এটি বন্দি করে রেখে পানাহার করায়নি এবং তাকে ছেড়েও দেয়নি যেন সে নিজে জমিনের পোকা-মাকড় খেতে পারে।” [সহিহ বোখারি: ৩৪৮২]

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবি (রহ) বলেছেন, হাদিসটি হতে বিড়াল পালন এবং বেঁধে রাখা জায়েজ বলে প্রমাণিত হয়, যদি না তাকে পরিচর্যা ও খাবারের ব্যাপারে কোন ত্রুটি না করা হয়। [ ফাতহুল বারি : ৬/৪১২]

ইসলামে বিড়াল পোষা জায়েজ হলেও এটি সুন্নত নয়। অনেকে এটিকে সুন্নত বলে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে। আল্লাহর নবীও বিড়াল পছন্দ করতেন এবং মাঝে মাঝে নবীজির ঘরে আসতো তিনি কখনো তাড়িয়ে দিতেন না।

বিড়াল মুখ দেওয়া পানি কি নাপাক?

হযরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত আছে, একদা মদিনার বাতহান নামক স্থানে অবস্থানকালে, নবীজি আমাকে ওজুর জন্য পানি আনতে বললেন। অজু করার পূর্ব মুহূর্তে একটি বিড়াল পাত্রের পানি খেতে দেখলে নবীজি পানি খাওয়া শেষ হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন । এবং সেই পানি দিয়ে অজু সম্পন্ন করলেন। আমার প্রশ্নে তিনি বললেন,“বিড়াল ঘরের প্রাণী। বিড়াল মুখ দেওয়ার কারণে পানি নোংরা বা নাপাক হয় না।” [নাসবুর রায়াহ]

এছাড়া,আয়েশা(রা) নিজে নবীজিকে বিড়ালে মুখ দেওয়া পানি দিয়ে ওজু করতে দেখেছেন বলে হাদিসে বর্ণিত আছে।

অতএব,ইসলামিক দৃষ্টিতে বিড়ালে মুখ দেওয়া পানি ব্যবহার করা যাবে তবে মুখে কোন প্রকার নাপাকি থাকলে সেক্ষেত্রে পানি ব্যবহার অনুপযোগী। এছাড়া, বিড়ালের প্রস্রাব-মল নাপাক বস্তু হওয়ায় ব্যবহার অনুপযোগী।

কালো বিড়াল নিয়ে হাদিস

বিড়াল নিয়ে ইসলামিক উক্তি দিতে গিয়ে অনেকে কালো বিড়ালকে অশুভ লক্ষণ বলে থাকে এ ধারণা বা প্রচলন মিথ্যা এবং কুসংস্কার। ভালো মন্দ সবকিছু তাকদিরের ওপর নির্ভর করে। আর আমাদের তাকদিরের নিয়ন্ত্রক হলো আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তায়ালা।

কালো বিড়াল নিয়ে কুসংস্কার বিশ্বাস করা মানে তাকদির অবিশ্বাস করা। আর তাকদিরে অবিশ্বাস করা নিঃসন্দেহে কবিরা গুনাহর শামিল। অর্থাৎ, এ ধরনের কুসংস্কার বিশ্বাস থেকে সর্বদা দুরা থাকতে হবে পাশাপাশি সমাজের সকলকে এমন কুসংস্কারের বিষয়ে অবগত করতে হবে।

বিড়াল বেচা-কেনা কি জায়েজ?

ইসলামে বিড়াল, কুকুর সহ যে কোন হিংস্র প্রাণী বেচা-কেনাকে অনুৎসাহিত করা হয়েছে এবং এমন কাজকে নাজায়েজ করা হয়েছে। তবে বিড়াল পোষা এবং উপহার হিসেবে লেনদেন করা যাবে। মালিক দাবি না করলে, নিজেই নিয়ে নেওয়া যাবে। অবশ্য বিড়াল পোষার ক্ষেত্রে যদি কেউ বেঁধে রাখে খেতে না দেয়, নির্যাতন করে এমন বিষয়কে ইসলাম সতর্ক করেছে এবং এর পরিনতিও হাদিসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে।

বিড়াল কেনাবেচা নিয়ে আবু যুবাইদা (রহ) হতে বর্ণিত আছে। আমি জাবির (রা) কাছে কুকুর ও বিড়ালের মূল্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেন।” [সহিহ মুসলিম, হাদিস, ১৫৬৯]

‘আল্লামা ইবনুল কাইয়ূম রহ. এটিকে সঠিক অভিমত বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ এ বিষয়ে সহীহ হাদিসে স্পষ্ট বর্ণিত আছে এবং এর বিপরীতেও কোন হাদিস নেই। সুতরাং এ কথা বলাই আবশ্যক।’ [যাদুল মায়াদ, ৫/৭৭৩]

অন্য হাদিসে এসেছে জাবির ইবনে ‘আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবি (সা.) ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুকুর ও বিড়ালের বিক্রয় মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।’ [সুনানে আবু দাউদ-৩৪৭৯]

হাদিসগুলোর উদ্ধৃতি থেকে বোঝা যায় যে, ইসলামে বিড়াল কেনা-বেচা সম্পূর্ণরূপে হারাম করা হয়েছে। তবে বিড়াল পোষাকে ইসলামে হালাল করা হয়েছে।

বিড়াল নিয়ে কুরআনের আয়াত

বিড়াল নিয়ে কুরআনের আয়াত স্পষ্টভাবে পাওয়া না গেলেও, কুরআনে বিভিন্ন প্রাণীর হালাল ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এবং সকল প্রাণীর প্রতি দায়িত্ব- কর্তব্য স্পষ্টভাবে বিবৃতি করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রাণিকুল সৃষ্টির (অন্যতম) কারণ হলো, এগুলোতে তোমরা আরোহণ করে থাকো আর এগুলো সৌন্দর্যের প্রতীক। [সুরা নাহল, আয়াত :৮]

হাদিসে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অহেতুক কোনো চড়ুই পাখি মেরে ফেলল, কিয়ামতের দিন পাখিটি আল্লাহর কাছে এই বলে নালিশ করবে যে, হে আল্লাহ, অমুক ব্যক্তি আমাকে অহেতুক হত্যা করেছে।’ [নাসায়ি, ইবনে হিব্বান]

অতএব, সকল প্রাণী তদ্রুপ বিড়াল পোষা নিয়ামত স্বরূপ হলেও এর সঠিক দেখভাল করা অতি আবশ্যক। কারণ কোন প্রাণীকে অহেতুক কষ্ট দেওয়া কবিরা গুনার শামিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

ارْحَمُوا مَنْ فِي الأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ » . (رواه الترمذي ).
“তোমরা পৃথিবীতে যারা আছে, তাদের প্রতি দয়া কর, তাহলে আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।

উপসংহার

মহান রাব্বুল আলামিন নিয়ামত রুপে জীব-জন্তু এ পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন যেন তার মাধ্যমে আমরা উপকৃত হতে পারি। অতএব, এসকল জীব-জন্তুর সঠিক রক্ষনাবেক্ষণ আমাদের কর্তব্য। অযথা কোন প্রাণীকে কষ্ট দেওয়া চরম গুনাহর শামিল। তদ্রুপ, বিড়াল পালনের ক্ষেত্রেও আমাদের সজাগ থাকা উচিত। তাই আমাদের এমন কোনো কাজ করা উচিৎ না যার কারণে পরকালে আল্লাহর দরবারে আমাদের দোষী সাব্যস্ত হতে হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪