পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা - খালি পেটে এলোভেরা খেলে কি হয়
পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি
মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। কারণ পুরুষদের জন্য এলোভেরার কি কি উপকারিতা রয়েছে এবং
কিভাবে সঠিক নিয়মে ব্যবহার করা যাবে তা এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি
আপনারা এ বিষয়টি সম্পূর্ণ করলে সকল তথ্যগুলো সঠিকভাবে জেনে যাবেন।
শুধু তাই নয় এই আর্টিকেলটি একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে খালি পেটে এলোভেরা
খেলে কি হয় এবং এলোভেরা রাতে ব্যবহার করলে কি কি উপকার পাওয়া যায় এবং এর জুস
কতটুকু উপকারী এবং কিভাবে তৈরি করে খাওয়া যায় তা সঠিকভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
ভূমিকা
আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন অ্যালোভেরা ত্বক ও চুলের জন্য কতটুকু উপকারী। সাধারণত
তাদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে এলোভেরা। অনেকেই চুলের
জন্যও এটি ব্যবহার করে। কিন্তু আপনারা কি জানেন পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার কি কি
উপকারিতা রয়েছে? হয়তো অনেকেই জানেন না। তাই আপনাদের সুবিধার্থেআজকের আর্টিকেলে
পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা এবং খালি পেটে এলোভেরা খেলে কি হয় তা
সঠিকভাবে জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। তাই দেরি না করে চলুন বিস্তারিত তথ্য জেনে
নেওয়া যাক।
অ্যালোভেরা জুস তৈরির নিয়ম
অ্যালোভেরা একটি ভেষজ উদ্ভিদ। যাকে বাংলা পরিভাষায় বলা হয় ঘৃতকুমারী। এই
অ্যালোভেরার অনেক উপকারিতা রয়েছে। বিশেষ করে ত্বক ও চুল সুন্দর করতে এলোভেরা জুস
অনেক বেশি উপকারী।
শুধু তাই নয় এর পাশাপাশি অ্যালোভেরার প্রচুর গুণ রয়েছে যেমন ত্বকের দাগ দূর
করতে, জন্ডিস থেকে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে, এইসব কিছু দূর করার ক্ষমতা রাখে
এলোভেরা। কমবেশি আমরা সকলেই এটাকে এলোভেরা নামেই চিনি।
এই অ্যালোভেরার গাছ বাড়ির বিভিন্ন সাইডে তৈরি করা হয়চ। কিন্তু এর যে জুসের
উপকারিতা রয়েছে তা অনেকেই জানেন না। আজকে আমি এই আর্টিকেলে অ্যালোভেরা জুস তৈরির
নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বড়, ছোট সব ধরনের কোম্পানিতে অ্যালোভেরা জুস খাঁটি বোতলে তৈরি করে বিক্রি করছে।
কিন্তু বর্তমান সময়ে কোন কিছুই খাঁটি বলে হয় না। কিছু না কিছু ভেজাল থাকবেই তাই
আপনার্ন বাড়িতে অ্যালোভেরার গাছ লাগান এবং সার, পানি এগুলো দিয়ে বড় করুন।
দেখতেও যেমন সুন্দর লাগবে এবং এখান থেকে এলোভেরা জুস, এলোভেরা জেল ইত্যাদি
বানিয়ে নিতে পারবেন। এখন কথা হল সঠিক নিয়মে
কিভাবে এলোভেরা জুস তৈরি করবেন?
নিম্নে অ্যালোভেরা জুস কিভাবে বানাবেন তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
১) যা লাগবেঃ-
- প্রথমত আপনাকে ফ্রেশ অ্যালোভেরা ২ টুকরা নিতে হবে।
- ১ গ্লাস পানি অথবা যে কোনও ফল বা সবজির জুস নিতে হবে।
- এরপর, তার সাথে চিনি গুঁড়া ২ চা চামচ, সামান্য মধু ও লেবুর রস ১ চা চামচ নিতে হবে।
- সর্বশেষে বিট লবণ, আধা চা চামচ এবং বরফ কুচি ৩/৪ টি
২) কীভাবে বানাবেনঃ-
- প্রথমত এলোভেরার পাতা ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর মিক্সারে দিয়ে ভালোভাবে পেস্ট বানিয়ে নিন। পেস্ট বানানো হয়ে গেলে পরিষ্কার গ্লাসে ছাকনি দিয়ে ভালোভাবে ছেঁকে নিন যাতে করে কোন অপ্রয়োজনীয় জিনিস না থাকে।
- এরপর মধু, লেবুর রস, বিট নুন ও চিনি গুঁড়া দিয়ে ভালোভাবে মিশ্রণ করতে হবে। মিশ্রণ করা সম্পূর্ণ হয়ে গেলে ওপর থেকে বরফ খুশি সরিয়ে দিয়ে পরিবেশন করুন অ্যালোভেরার জুস। মূলত অ্যালোভেরা জুস তৈরির নিয়ম এভাবেই।
ত্বকে অ্যালোভেরার উপকারিতা
অ্যালোভেরা ত্বকের জন্য কতটা উপকারী তা আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না। আজকে আমি
এই আলোচনায় ত্বকে অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। প্রায়
কম বেশি আমাদের অনেকেরই ত্বকের সমস্যা।
বাইরে বের হলেই বিভিন্ন ধরনের ধুলাবালিতে ত্বকের অবস্থা হয়ে যায় খুবই শোচনীয়।
নিজেদের ব্যস্ততার কারণে পার্লারে গিয়ে ত্বকের যত্ন নেওয়ারও তেমন একটা সুযোগ
হয় না। তবে আপনি চাইলে প্রাকৃতিক উপায়ে এলোভেরা ব্যবহার করে ত্বক ভালো রাখতে
পারবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক উপাদান। এতে
কোনরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তাই ত্বক সুন্দর রাখতে প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে
এলোভেরা অত্যন্ত উপকারী। তাই আসুন ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারিতা কি কি
রয়েছে তা জেনে নিন।
- ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে, ত্বকের দাগ মুক্ত করতে, মসৃণ রাখতে, ত্বকের ব্রণ দূর করতে বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে অ্যালোভেরা। তাই আপনারা চাইলে ত্বকের যত্নে এলোভেরা ব্যবহার করতে পারেন।
- যে সকল ব্যক্তিদের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল তারা ত্বকে কোনরকম কেমিক্যাল ব্যবহার না করে (নাইট ক্রিম) হিসেবে অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন নিয়ম অনুসারে ত্বকে ব্যবহার করার জন্য আপনারা চাইলে বাড়িতেই অ্যালোভেরা গাছ লাগাতে পারেন। এতে করে আপনি প্রতিদিন তাজা পাতা ত্বকে ব্যবহার করতে পারবেন।
- যদি আপনারা এলোভেরা ত্বকে লাগাতে চান তাহলে আপনাদের প্রথমে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর একটি তাজা এলোভেরার পাতার ভেতর থেকে রস সংগ্রহ করে নিতে হবে। এরপর সেই এলোভেরার রস নরম তুলার সাহায্যে মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। মূলত এভাবেই লাগিয়ে রাখলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে অনেক উজ্জ্বল।
- যদি অ্যালোভেরার রস শুকিয়ে যায় তাহলে এভাবেই ঘুমিয়ে পড়বেন। সারারাত এলোভেরা রস ত্বকে থাকলে, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে।
- ত্বকে এলোভেরার রস লাগানোর জন্য সুতির কাপড় কিংবা তুলো ছাড়া অন্য কিছু ব্যবহার করা উচিত নয়। হয়তো এতে করে আপনার অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
- অনেক সময় বিভিন্ন কারণে ত্বকে ক্ষত দেখা দেয়। তবে এই ক্ষত এড়াতে এলোভেরার সাহায্য নিতে পারেন। আপনার ক্ষতস্থানে এলোভেরা ব্যবহার করলে দ্রুত মসৃণ হতে সাহায্য করে।
- অ্যালোভেরার জেল ত্বকে ব্যবহারের পাশাপাশি শরীরেও ব্যবহার করতে পারবেন। তবে একটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন এলোভেরা রস বা জেল ত্বকে লাগিয়ে কখনোই রোদে যাবেন না। তাতে করে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। তাই অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা
যদি আপনারা শরীর সুস্থ এবং শক্তিশালী রাখতে চান তাহলে অবশ্যই এলোভেরার জুস খাওয়া
শুরু করুন। কারণ এলোভেরা জুস খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের বয়সের ছাপ পড়বে না। আর
পাশাপাশি যৌবন ধরে রাখতেও অনেক বেশি সাহায্য করবে।
বর্তমান সময়ে পুরুষদের ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কিন্তু যদি তারা
প্রতিদিন এলোভেরা জুস খেতে পারে তাহলে আশা করি পুরুষদের ত্বক অনেক সুন্দর ও কোমল
থাকবে। শুধু তাই নয় ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতেও অনেক বেশি সাহায্য করবে।
এছাড়াও এলোভেরা জুস খাওয়ার ফলে ত্বকের সকল সমস্যা দূর হবে।
অ্যালোভেরার প্রাকৃতিক উপাদানটি কাজে লাগিয়ে আমাদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা থেকে
খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। অনেকেই জানতে চেয়েছেন পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার
উপকারিতা কতটুকু রয়েছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে আসুন জেনে নেওয়া যাক।
হার্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতেঃ অনেক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যদি কোন
পুরুষ এলোভেরা জুস খেতে পারে তাহলে তার শরীরের অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রভাব
বাড়াতে থাকে। ফলে শরীরের সমস্ত কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়ে যায়।
তার পাশাপাশি শরীরের হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও অনেক বেশি সাহায্য করে। ফলে
রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল দূর হয় এবংহার্টের যেকোনো সমস্যা কিংবা রোগ থাকলে খুব
সহজেই দূর হয়। এতে করে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
বয়স কমাতেঃ আপনারা যারা অল্প বয়সেই বয়সের ছাপ পড়ে যায়। তারা চাইলে
এলোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এটা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ,
ভিটামিন বি এবং ভিটামিন সি। ভিটামিন এ আপনার ত্বকের ভেতর থেকে ভালো রাখতে অনেক
বেশি সাহায্য করে।
এছাড়াও ভিটামিন বি এবং বিটা ক্যারোটিনের মত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ আপনাদের
ত্বকের ফ্রি রেডিকেল থেকে রক্ষা করতে বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে। ফলে আপনার
ত্বকের বয়সের ছাপ কমায় এবং বলে রেখা দূর করতে সহায়তা করে। শুধু তাই নয়
এলোভেরা জেল ত্বকের ভেতর থেকে টানটান করতেও সাহায্য করে ফলে ত্বক অনেক সুন্দর ও
মসৃণ হয়ে থাকে।
এলোভেরা টক্সিন নির্মূল করতে সাহায্য করেঃ যদি কোন ব্যক্তির শরীরে টক্সিন
এর মাত্রা বেড়ে যায়। তাহলে ধীরে ধীরে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সব অচল ও
প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। তাই এই সমস্যা হওয়ার আগে অবশ্যই প্রাকৃতিক উপায়ে
এলোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন।
অ্যালোভেরা খেলে শরীরে অ্যান্টিক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায় যার কারণে
শরীরের মধ্যে থাকা টক্সিন গুলো খুব সহজেই বেরিয়ে যায়। এতে করে আপনার শরীর অনেক
শক্তিশালী এবং কর্মার্থ হয়ে ওঠে।
ওজন কমাতেঃ আপনারা যদি ওজন কমাতে চান তাহলে এলোভেরা খেতে পারেন। কারণ
এলোভেরার মধ্যে রয়েছে খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দ্রুত ওজন কমাতে ও ক্ষুধা
নিবারণ করতে সাহায্য করে।
ফলে আপনার ক্ষুধা কম লাগবে এবং খাওয়ার পরিমাণ টাও কমে যাবে এতে করে আপনার ওজন
কমাতেও অনেক বেশি সহজ হবে। তবে এলোভেরা খাওয়ার পাশাপাশি ওজন কমাতে আপনাকে
শারীরিক ব্যায়াম এবং সুস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃ যদি আপনাদের শরীরে পুষ্টির ঘাটতি পরে তাহলে
প্রতিদিন এলোভেরা খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন। কারণ এলোভেরা খাওয়ার ফলে আপনার
শরীরের পুষ্টির ঘাটতি খুব সহজেই পূরণ হয়ে যাবে।
শরীরে বিভিন্ন পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে অনেক বেশি সাহায্য করে এলোভেরা। তাছাড়াও
লোহিত কণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি করতেও অনেক বেশি সাহায্য করে এলোভেরা। পাশাপাশি
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করে এবংগ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ও দূর করতে এলোভেরা জুস
সাহায্য করে।
সাধারণত অনেক গরমে আমার আপনার শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে এলোভেরা জুস অনেক
বেশি সাহায্য করে। পাশাপাশি ত্বক ভালো রাখতেও সহায়তা করে। তাই আপনারা চাইলেই
তাজা এলোভেরা খাওয়ার জন্য বাড়ির পাশেই অ্যালোভেরার গাছ লাগিয়ে রাখতে পারেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেঃ যদি আপনারা সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে চান
তাহলে প্রতিদিন নিয়ম করে এলোভেরা জুস খান। কারণ এটি খেলে আপনার অসুখ-বিসুখ খুব
কম। এলোভেরা জুসে রয়েছে বিভিন্ন উপাদান যাশরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
করতে অনেক বেশি সাহায্য করে। ফলে সর্দি, কাশি, জ্বর সবকিছু থেকে খুব সহজেই রক্ষা
পাওয়া যায়।
খালি পেটে এলোভেরা খেলে কি হয়
প্রিয় পাঠক পূর্বে আমরা জেনে এসেছি পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা
সম্পর্কে। এখন আমরা জেনে নিবো খালি পেটে এলোভেরা খেলে কি হয় এই সম্পর্কে। আমাদের
মধ্যে এমন অনেকের রয়েছে তারা জানেন না কখন খেতে হয়। তাই আপনারা যারা এই বিষয়টি
সম্পর্কে জানেন না তারা অবশ্যই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
খালি পেটে খাওয়াঃ মূলত অ্যালোভেরার জেল বা রস সকালে খালি পেটে খেলে অনেক
বেশি উপকার পাওয়া যায়। এতে করে হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে পাশাপাশি
মেটাবলিজম উন্নত করতে এবং ডিটক্সিফিকেশন করতে অনেক বেশি সাহায্য করে।
তাই আপনারা চাইলে প্রতিদিন ১ থেকে ২ চামচ এলোভেরা জেল বা আধা কাপ অ্যালোভেরার রস
পান করতে পারেন। আশা করি অনেক উপকার পাবেন।
খাওয়ার আগেঃ খাবার খাওয়ার কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পূর্বে অ্যালোভেরার
জেল খেতে পারেন। এতে করে আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা উপশম করতে অনেক বেশি সাহায্য
করবে পাশাপাশি সহায়তা করবে।
রাতে ঘুমানোর আগেঃ এছাড়াও আপনারা চাইলে রাতে ঘুমানোর আগে অ্যালোভেরার জেল
বা রস খেতে পারেন। এতে করে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যর একমাত্র সমস্যা থাকলে দূর হয়ে
যাবে এবং হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করবে।
খাওয়ার সাথে বা পরেঃ আপনারা কখনোই খাবার খাওয়ার সাথে কিংবা পরে এলোভেরা
জেল বা রস পান করবেন না। কারণ খাবারের সাথে বা পরে অ্যালোভেরা খেলে হজমের
প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে পারে।
সতর্কতাঃ যদি আপনি প্রথমবার এলোভেরা
খান, তাহলে পরিমাণের চেয়েও কম খাবেন। কারণ প্রথম অবস্থায় অ্যালোভেরা অতিরিক্ত
খেলে আপনার শরীরে সমস্যা হতে পারে। তাই অল্প পরিমাণে অ্যালোভেরা খেতে হবে এবং
দেখতে হবে শরীরের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা।
শুধু তাই নয় দীর্ঘ সময় ধরেও প্রতিদিন এলোভেরা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অন্তত ২
থেকে ৩ সপ্তাহ পরপর খাওয়া থেকে বিরত দিন। যদি আপনার কোন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা
দেয় বা থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারে পরামর্শ গ্রহণ করুন।
রাতে এলোভেরা ব্যবহার
এলোভেরা গাছ অসাধারণ স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য উপকারিতার জন্য বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়।
ত্বকের যত্নে এলোভেরা জেলের ব্যবহার দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, এবং বিশেষ করে রাতে
এটি ব্যবহার করা ত্বকের জন্য আরো বেশি উপকারী। আপনি যদি রাতে এলোভেরা জেল ব্যবহার
করতে পারেন তাহলে আশা করি এটি প্রাকৃতিকভাবে ত্বকে কাজ করবে।
কারণ এ সময় আমাদের ত্বক নিজে থেকে পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় থাকে।এলোভেরার
মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই ত্বকের কোষগুলিকে
পুনরুজ্জীবিত করে, যা রাতে ত্বকে এলোভেরা জেল ব্যবহারের অন্যতম প্রধান সুবিধা।
রাতে এলোভেরা ব্যবহার করলে এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং শুষ্ক ত্বককে মসৃণ
করে তুলতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এলোভেরা ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ত্বককে
হাইড্রেটেড রাখে, ফলে ত্বক হয়ে ওঠে কোমল ও উজ্জ্বল। বিশেষ করে শীতকালে শুষ্ক
ত্বককে আর্দ্র রাখার জন্য রাতে এলোভেরা খুব কার্যকর।
এছাড়াও এলোভেরা জেল রাতে ব্যবহার করলে এটি ত্বকের দাগ, ব্রণ এবং কালো দাগ হালকা
করতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণাগুণ ত্বকের লালচেভাব এবং ব্রণের
প্রদাহ কমায়। এলোভেরা ব্রণ নির্মূল করার পাশাপাশি ত্বকের টানটান ভাব বজায় রাখে
এবং মুখের ছোট ছোট দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
রাতে এলোভেরা জেল ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বক আরও উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়ে ওঠে। এর
ভিটামিন সি ত্বকের পিগমেন্টেশন দূর করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এটি
ত্বকের বয়সজনিত লক্ষণ যেমন, বলিরেখা ও ফাইন লাইনস কমাতে সাহায্য করে। আপনারা যদি
এলোভেরা নিয়মিত ব্যবহার করেন তাহলে ত্বক হয়ে উঠবে আরও স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর।
এলোভেরা শুধু ত্বকের জন্যই নয়, এটি হেয়ার কেয়ার এবং মাস্ক হিসেবেও ব্যবহার করা
যায়। তবে, এলোভেরা ব্যবহারের আগে ত্বকের একটি ছোট অংশে পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো,
কারণ কিছু মানুষের ত্বকে এলোভেরা ব্যবহারে এলার্জি হতে পারে।
রাতে ত্বকের যত্নে এলোভেরা একটি প্রাকৃতিক ও সাশ্রয়ী সমাধান, যা ত্বককে গভীর
থেকে পুষ্টি ও আর্দ্রতা জোগায়। এলোভেরা ব্যবহারে ত্বক সুন্দর, সতেজ ও
স্বাস্থ্যোজ্জ্বল থাকে, যা দীর্ঘদিন ধরে আপনাকে তারুণ্য ও উজ্জ্বল ত্বকের আনন্দ
উপভোগ করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় এর পাশাপাশিও রাতে
এলোভেরা ব্যবহার করলে আরো ১৫ টি উপকার পাওয়া যায় যেমনঃ-
- ত্বক আদ্র রাখে
- ত্বক মসৃণ করে
- চুল মজবুত করে
- ব্রণের প্রদাহ কমায়
- শুষ্ক ত্বক মসৃণ করে
- চুলের খুশকি দূর করে
- মাথার ত্বক আদ্র রাখে
- ত্বকের বলি রেখা কমায়
- চোখের ফোলা ভাব কমায়
- ত্বকের দাগ সারিয়ে তোলে
- ত্বকের সজীবতা বৃদ্ধি করে
- ত্বকের ব্যালেন্স বজায় রাখে
- রোদে পড়া ত্বক নিরাময় করে
- চোখের নিচে কালো দাগ দূর করে
- ত্বকের ফুসকুড়ি ও চুলকানি দূর করে
এলোভেরা জেল ব্যবহারের নিয়ম
স্বাস্থ্যকর ময়েশ্চারাইজারঃ ত্বকের ময়শ্চারাইজেশনের জন্য ব্যবহার করুন।
আশা করি ভালো ফলাফল পাবেন।
প্রাকৃতিক স্ক্রাবঃ আপনার স্বাস্থ্যকর শরীর ও মুখের স্ক্রাব তৈরি করতে ১
চামচ জেল এবং ১ চামচ চিনি একসঙ্গে মিশ্রণ করে ব্যবহার করুন।
রোদে পোড়া ত্বকঃ যাদের রোদে পড়ার ত্বক রয়েছে তারা একটি প্রশান্তিদায়ক
প্রভাবের জন্য রোদে পোড়া ত্বকেঅ্যালোভেরা ব্যবহার করুন। প্রতিদিন ব্যবহারে ফলে
আশা করি অনেক বেশি উপকার পাবেন।
অ্যান্টি-এজিং প্রোটেক্টরঃ আপনার হাত মুখ এবং ঘাড়ে এলোভেরা জেল ম্যাসাজ
করুন। মেসেজ করা হয়ে গেলে সেটি শুকাতে দিন। অ্যান্টি-এজিং সুবিধার জন্য এলোভেরা
জেল রাতারাতি রেখে দিন। এতে করে আপনি খুব সহজেই ভালো ফলাফল পাবেন।
রুক্ষ ত্বক মসৃণ করতেঃ যদি আপনার ত্বক রুক্ষ হয় তাহলে অ্যালোভেরার জেল
ত্বকে ব্যবহার করুন পাশাপাশি আপনার কোনই এবং হাঁটুতে লাগিয়ে রাখুন। আশা করি
রুক্ষ ত্বক মসৃণ হতে সাহায্য করবে।
চুল এবং মাথার ত্বকের পুষ্টিকরঃ আপনার মাথায় ভালোভাবে এলোভেরা জেল মালিশ
করুন এবং সেটি সারারাত রেখে দিন এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে শ্যাম্পু ও পরিষ্কার পানি
দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন।
ভ্রু তে ব্যবহার করুনঃ আপনারা চাইলে ভুতে ক্রাশ ব্যবহার করে অ্যালোভেরার
জেল লাগিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে
ধুয়ে ফেলুন।
ঠোঁটে ব্যবহার করুনঃ আপনার হাতের আঙ্গুল দিয়ে ফাটা ঠোঁটে অ্যালোভেরার জেল
সামান্য পরিমাণে লাগিয়ে রাখুন। এইভাবে দিনে ১ থেকে ২ বার ব্যবহার করুন।
লেখকের মন্তব্য | পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা
সম্মানিত পাঠক আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার
উপকারিতা সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পেরেছেন। এলোভেরা শুধু পুরুষদের জন্য নয় ছেলে
মেয়ে উভয়ের জন্যই অনেক বেশি উপকারী। বিশেষ করে ত্বক ও চুলের উপকারের জন্য
প্রাচীনকাল থেকেই অ্যালোভেরা প্রাকৃতিক ভেজস উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেল করে আপনারা অনেক বেশি উপকৃত হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত
আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক বেশি ধন্যবাদ।
এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url