গর্ভাবস্থায় গরুর মগজ খাওয়া যাবে কি? জেনে নিন
গর্ভাবস্থায় গরুর মগজ খাওয়া যাবে কি? এই বিষয়টি সম্পর্কে আপনারা যদি জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেল সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কারণ এই আর্টিকেলে এই বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে যা আপনার জন্য অনেক উপকারী হতে চলেছে। তাই দেরি না করে আসুন জেনে নিন।
এই আর্টিকেল একদম শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনারা গর্ভাবস্থায় গরুর মাংস খাওয়ার উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় গরুর কলিজা খাওয়া যাবে কি, গর্ভাবস্থায় নেহারি খাওয়া যাবে, গর্ভাবস্থায় গরুর ভুড়ি খাওয়া যাবে কিনা, গর্ভাবস্থায় মহিষের মাংস খাওয়া যাবে কি এই সকল বিষয়ে জেনে যাবেন।
ভূমিকা
অনেক গর্ভবতী মায়েরা রয়েছে যারা গরুর মাংস খেতে কিংবা গরুর মগজ কেটে পছন্দ করে। আবার কেউ কেউ করেন না। তবে গরুর মাংস আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না। বিশেষ করে যারা গর্ভাবস্থায়ী রয়েছে তাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী এই মাংস। তাদের কি কি উপকারিতা রয়েছে যারা জানেন না তারা এই আর্টিকেল সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। কারণ এই আর্টিকেলে গর্ভাবস্থায় গরুর মগজ খাওয়া যাবে কি না এবং গর্ভাবস্থায় গরুর ভুড়ি খাওয়া যাবে কিনা এই সকল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো যা আপনার/আপনার পরিবারের জন্য হইত অনেক উপকারী হতে চলেছে। তাই আসুন আর দেরি না করে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।
গর্ভাবস্থায় গরুর মাংস খাওয়ার উপকারিতা
গরুর মাংসে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। অন্যান্য খাবারের তুলনায় গরুর মাংসের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন পাওয়া যায়। আমরা অনেকেই গরুর মাংস দিয়ে অত্যাধিক মাল্টি প্রোটিন হিসেবে চিনে থাকি। কারণ এই গরুর মাংস অত্যাধিক দশটি পুষ্টি উপাদানের উৎস। যার মধ্যে অন্যতম হলো প্রোটিন।
প্রোটিনঃ গরুর মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। এই গরুর মাংস গর্ভাবস্থায় খেলে মাংস বেশি শক্তিশালী করতে অনেক বেশি সাহায্য করবে।
জিংকঃ গর্ভকালীন সময়ে অনেক গর্ভবতী মায়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ফলে বিভিন্ন রোগ এসে বাসা বাঁধে। তাই এই সময় পরিমাণমতো গরুর মাংস খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এতে করে আপনার বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে খুব সহজেই মুক্তি মিলবে।
ফসফরাসঃ গর্ভাবস্থায় গরুর মাংস খেলে মজবুত হাড় ও দাঁত বিকাশে অনেক বেশি সহায়তা করবে।
আয়রনঃ গর্ভকালীন সময়ে অনেক মায়েদের রক্তের মাত্রা কমে যায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তবে এই সময় যদি পরিমাণ মতো গরুর মাংস খেতে পারেন তাহলে রক্তস্বল্পতা কমাতে এবং শরীরের সকল কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করাতে অনেক বেশি সাহায্য করে।
কেননা এই গরুর মাংসের আয়রন একজন গর্ভবতী মায়েদের শরীরে ভালোভাবে স্থাপিত হয়। অন্যান্য খাবারে তুলনায় গরুর মাংসের প্রচুর পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায়। তাই রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য গরুর মাংস বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন বিঃ গর্ভাবস্থায় প্রতিনিয়ত পরিমান মত গরুর মাংস খেলে আপনার গর্ভে থাকা শিশুর শরীর গঠনে বিভিন্নভাবে কাজে লাগে।
গর্ভাবস্থায় গরুর কলিজা খাওয়া যাবে কি
আপনাদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছে যারা প্রশ্ন করেছেন গর্ভাবস্থায় গরুর কলিজা খাওয়া যাবে কি না। তাই আপনাদের সুবিধার্থে আজকে আমি এই আর্টিকেলে এই বিষয়টি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনারা এ বিষয়টি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
গর্ভাবস্থায় গরুর কলিজা খাওয়া যাবে তবে পরিমাণ চেয়েও অনেক কম। অর্থাৎ সপ্তাহে একবার ৫০ থেকে ৭০ গ্রাম রান্না করা কলিজা খেলে কোনরকম সমস্যা হবে না। তবে গর্ভকালীন সময়ে বেশি কলিজা খাওয়া সম্পূর্ণই নিষেধ। কেননা কলিজাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এই থাকে।
যদি আপনারা অতিরিক্ত পরিমাণে খান তাহলে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় কলিজা ছাড়া আপনি চাইলে গরুর মাংস কিংবা অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারেন। তবে আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে যদি আপনি ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করেন। কারণ গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন খাবার খাদ্য তালিকায় যোগ করতে হয় আবার বাদ দিতে হয়।
তাই কোন খাবারগুলো আপনার জন্য স্বাস্থ্যকর হবে তা একমাত্র ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করলেই জানতে পারবেন। তবে সাধারণভাবে কয়েকটি খাবার নিজে দেওয়া হল যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া যেতে পারে। যেমন-
- শর্করা জাতীয় খাবার। (যেমন- ভাত ও রুটি)
- টাটকা সবুজ ও রঙিন শাক
- ফল ও সবজি
- ডিম
- দুধ
- মাছ,
- মাংস ও ডাল ইত্যাদি।
গর্ভাবস্থায় গরুর মগজ খাওয়া যাবে কি
অনেক গর্ভবতী মেয়েরা রয়েছে যারা গর্ভাবস্থায় গরুর মগজ খেয়ে থাকেন। তবে গর্ভাবস্থায় গরুর মগজ খাওয়া যাবে কি না এই বিষয়টি কয়জন জানে? আপনার হয়তো এই বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্যই এই পর্যন্ত এসেছেন। পাঠক গর্ভাবস্থায় গরুর মাংস বা মগজ খাওয়া সাধারণত বিভিন্ন কারণে সুপারিশ করা হয় না। তার কারণ হলো সংক্রমনের ঝুঁকি।
অর্থাৎ যদি আপনারা গর্ভকালীন সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া গরুর মাংস বা মগজ খেয়ে থাকেন তাহলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। যেমন- মস্তিষ্কে বিভিন্ন সংক্রমণের উৎস হতে পারে। যার মধ্যে ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী যা টক্সোপ্লাজমা দ্বারা সৃষ্ট হয়, ফলে মা এবং বিকাশমান ভ্রূণ উভয়ের জন্যই অনেক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
শুধু তাই নয় গরুর মগজ সহ অঙ্গের মাংসগুলোতেও অনেক বেশি কোলেস্টেরল পাওয়া যায় যদিও কিছু কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় তবে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত গ্রহণের পরামর্শ কখনোই দেওয়া হয় না। এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে গরুর মগজ খেলে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে যেমন- গরুর মস্তিষ্কে উপস্থিত হতে পারে এমন কিছু বিষাক্ত বা দূষক পদার্থ সংস্পর্শে আসা ঝুঁকির ফলে বিকাশকে প্রবাহিত করতে পারে।
তবে গর্ভকালীন সময়ে আপনারা যদি গরুর মগজ খেতে চান বা ইচ্ছে করেনি তাহলে ভালোভাবে রান্না করে খেতে পারবেন তবে গরুর মগজ খাওয়ার আগে অবশ্যই খাদ্য পরামর্শের জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রধান কারী সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত ভালো।
তার আপনার স্বাস্থ্য চাহিদা এবং স্থানীয় খাদ্য নিরাপত্তা সুপারিশের জন্য নির্দেশ প্রদান করতে পারবে। তাহলে আশা করি গর্ভাবস্থায় গরুর মগজ খাওয়া যাবে কি না এই বিষয়ে সঠিকভাবে জানতে পেরেছেন।
গর্ভাবস্থায় নেহারি খাওয়া যাবে
আমি যতোটুকু জানি নেহারি খাওয়ার কোন প্রকার অপকারিতা নেই। বরং, বিভিন্ন প্রকার উপকার রোয়েছে। যেমন- শরীরের ক্যালসিয়াম বৃদ্বি, শরীরে শক্তি সঞ্চার, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, শরীরের হাড় মজবুত ইত্যাদি আরো বিভিন্ন উপকারী হিসেবে নেহারি কার্য সম্পাদন কোরে থাকে।
গর্ভাবস্থায় নেহারি খাওয়া যাবে কি না এই বিষয়টি নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন। দেখুন আমি যতটুকু জানি গর্ভাবস্থায় গরুর নেহারি খাওয়ার তেমন কোন অপকার নেই বরং বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে। বর্তমান সময়ে ঈদে কিংবা অন্যান্য সময়ে অনেকেই গরুর নেহারি কিনে ভালোভাবে রান্না করে খেয়ে থাকেন।
গর্ভাবস্থায় গরুর নেহারি খেলে আমার জানামতে শরীরের ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি হয় এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়। শুধু তাই নয় গর্ভাবস্থায় গরুর নেহারি খাওয়ার ফলে শরীরের হাড় মজবুত হয়ে থাকে এবং শরীরের শক্তি সঞ্চার করতে অনেক বেশি সাহায্য করে।
এর বাইরেও আরো বিভিন্ন উপকার হিসেবে নিহারী কার্য সম্পাদন করে থাকে। তারা আশা করি আপনারা এই বিষয়টি জেনে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় নেহারি হওয়া যাবে কিনা। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় গরুর ভুড়ি খাওয়া যাবে কিনা।
গর্ভাবস্থায় গরুর ভুড়ি খাওয়া যাবে কিনা
অনেক গর্ভবতী মায়েরা মনে করেন গর্ভ অবস্থায় গরুর ভুড়ি খিলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। তবে যে সকল মায়েরা এই সকল কথা মনে করেন তারা আসলে কি জানেন গরুর ভুড়ি খেলে একজন গর্ভবতীর কি কি হতে পারে? আপনাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না।
আজকে আমি এই পোস্টে গর্ভাবস্থায় গরুর ভুড়ি খাওয়া যাবে কিনা এই বিষয়টি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। তাই আশা করি আপনারা সকলেই এই বিষয়টি জানার জন্য পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
গর্ভাবস্থায় গরুর ভূড়ি খেতে পারবেন তবে পরিমাণ মতো। যদি আপনার গরুর ভূড়ি খেতে অনেক বেশি ইচ্ছা হয় তাহলে প্রতিদিন অল্প কিছু খাবেন। অতিরিক্ত খেলে পরবর্তীতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
গরুর ভুড়ির মধ্যে সাধারণত ২ রকমের চর্বি রয়েছে ১) স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ২) ট্রান্সফার ফ্যাট। স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা ১.৩ গ্রাম এবং ট্রান্সফার্ডের মাত্রা ০.২ গ্রাম থাকে। এর কারণে গর্ভবতী মায়েদের ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি হতে পারে। অনেক ডাক্তার গর্ভাবস্থায় গরুর ভূড়ি খেতে মানা করে। তবে খেলে বাচ্চার সমস্যা হবে না।
গর্ভাবস্থায় মহিষের মাংস খাওয়া যাবে কি
হ্যাঁ গর্ভাবস্থায়ী মহিষের মাংস খাওয়া যাবে। কারণ পুষ্টিগত বা গুণগনের দিক দিয়ে মহিষের মাংস গরুর মাংসের চেয়েও কোন অংশে কম নেই। বরং অনেক ক্ষেত্রে ভালো। সাধারণত মহিষের মাংস গরুর তুলনায় কিছুটা শক্ত হয়ে থাকে এবং একটু কালচে রঙের এবং সারপ্রাই একই রকম হলেও গুণগত মানের দিক দিয়ে গরুর মাংসের তুলনায় মহিষের মাংস বেশি স্বাস্থ্যসম্মত।
তার কারণ হলো মহিষের মাংসে গরুর মাংসের চেয়ে অনেক কোলেস্টেরল ও চর্বি কম থাকে এবং তুলনামূলক প্রোটিন অনেক বেশি থাকে যার কারণে অনেকেই মহিষের মাংস খেতে পছন্দ করেন। শুধু তাই নয় অনেক গর্ভবতী মায়েরা মহিষের মাংস খেতে পছন্দ করেন না।
কিন্তু অনেকেই জানেন না যে মহিষের মাংস খেলে কি উপকার হতে পারে। সাধারণত গর্ভাবস্থায় মহিষের মাংস খেলে আয়রনের ঘাটতি মেটাতে অনেক বেশি সাহায্য করে।এছাড়াও মহিষের মাংস থাকা ভিটামিন বি শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য অনেক বেশি সাহায্য করে।
তাই যে সকল মহিলারা মহিষের মাংস খেতে পছন্দ করেন না তারা আজকে থেকে খাবার চেষ্টা করুন। মহিষের মাংস আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
লেখকের শেষ কথা | গর্ভাবস্থায় গরুর মগজ খাওয়া যাবে কি
প্রিয় ভিজিটর আপনারা হয়তো এই আর্টিকেলের একজন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে গর্ভাবস্থায় গরুর মগজ খাওয়া যাবে কি না এবং গর্ভাবস্থায় গরুর ভুড়ি খাওয়া যাবে কিনা এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। তাই যদি আপনি এই বিষয়গুলো জেনে উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে আপনার মতামত জানিয়ে দিন। আর এরকম আরো আর্টিকেল পেতে এই ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অভিনন্দন।
এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url