পুরুষ লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
পুরুষ লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা সম্পর্কে আপনার যদি জানার আগ্রহ থাকে তাহলে এই
আর্টিকেল সম্পূর্ণ একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। তাহলে আশা করি আপনারা এই
বিষয়টি সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে যাবেন।
এছাড়াও আপনারা যারা পুরুষ লজ্জাবতী গাছ চেনার উপায় খুঁজছেন তারাও এই আর্টিকেল
থেকে জেনে নিতে পারবেন। তাই আর দেরি না করে আসুন সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি ধৈর্য
সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
লজ্জাবতী গাছ প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এই
গাছটি বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে বাড়ির আশেপাশে দেখা যায়। তবে এই গাছটি দেখে অনেকেই
অবহেলা করে কিন্তু এর যে গুনাগুন রয়েছে তা অনেকেই জানেন না। আজকে আমি এই
আর্টিকেলে পুরুষ লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা এবং পুরুষ লজ্জাবতী গাছ চেনার উপায়
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনারা যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়েন তাহলে বুঝতে
পারবেন লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা কি কি রয়েছে। তাই আর দেরি না করে আসুন মূল অংশে
যাওয়া যাক।
সাদা লজ্জাবতী গাছ চেনার উপায়
গ্রাম অঞ্চলে এবং পথের ধারে বাড়ির আনাচে-কানাচে প্রায় সময়ই জন্ম নেয় এই গাছ।
ছোট গুল্মজাতীয় গাছটির নাম লজ্জাবতী। মূলত এটির পাতা স্পর্শ করলে আশ্চর্যজনকভাবে
বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার সেই আগের অবস্থায় ফিরে সতেজে ওঠে সাদা
লজ্জাবতীর গাছ।
আজকে আমি সাদা লজ্জাবতী গাছ চেনার উপায় সম্পর্কেই আলোচনা করছি। অত্যন্ত দ্রুত
অনুভূতি সম্পন্ন এই গাছ। এই গাছের রয়েছে নানা ঔষধি গুন। সাদা লজ্জাবতী গাছ একটা
আছে ত্রেকাটা, আরেকটা আছে চৌকাটা। সাদা গাছটির চৌকাটা কাটার দার হল চারটি।
অর্থাৎ এই সাদা লজ্জাবতী গাছের চারিপাশের কাঁটা থাকবে যেমনটা উত্তর দক্ষিণ এবং
পূর্ব পশ্চিম। এই সাদা লজ্জাপতি গাছটি পাওয়া খুবই দুর্লভ। অনেকেই সাধারণ যুবতী
গাছ দেখতে কেমন হয় তাও জানেন না। লাল লজ্জাবতী আর সাদা লজ্জাবতী মূলত তাদের
গায়ের রং এর পার্থক্য দেখা যায়। শুধু তাই নয় তাদের পাতা একই কিন্তু রং আলাদা।
সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড়
সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড় কি কি কাজে লাগে আজকের এই অংশটুকু থেকে জেনে নিন। এই
লজ্জাবতী গাছের শিকড় দিয়ে যেমন বশীকরণ করা হয় তেমনি অনেক রোগেরও প্রতিকার করা
হয়। এই লজ্জাবতী গাছের শিকড় তন্ত্রে অনেকও ব্যবহার আছে।
যেমন কয়েকটি বিষয় আপনাদেরকে বলবো। লজ্জাবতী গাছ দুই প্রকারের হয়ে থাকে একটি
লাল একটি সাদা। লাল গাছটির ফুলগুলি গোলাপি রঙের হয় থাকে সাদা রঙের হয়ে থাকে
তান্ত্রিক মতে লাল গাছটি থেকেও সাদা গাছের ব্যবহার অনেক বেশি। বশীকরণের ক্ষেত্রে
সাদা এবং লাল দুটি লজ্জাবতী কার্যকরী হয়।
তবে বেশিরভাগ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সাদা টিকেই ব্যবহার করা হয়। লজ্জাবতি গাছের
পাতা দিয়ে বেশিরভাগ বশীকরণ গুলি হয়ে থাকে। তবে শিকড় দিয়েও বশীকরণ হয়। সাদা
লজ্জাবতী গাছের শিকড় দিয়ে অনেক টোটকা আছে। শ্বেত লজ্জাবতী গাছের শিকড় দিয়ে যে
টোটকা গুলি হয় তার মধ্যে ২ থেকে ৪টি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে
বলবো।
প্রথমে বশীকরণের একটি পদ্ধতি আপনাদেরকে বলছি যদি আপনি কোন কর্মে যান আপনি চান সে
আপনার প্রতি বশীভূত হোক। তাহলে এই সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড় নেবেন এবং থেত করে
রস বার করবেন তার সহিত গুড় ও চনা মিশিয়ে কপালে তিলক কেটে তার সহিত সাক্ষাৎ
করবেন।
আর যদি বাতাস লাগে বা দৃষ্টি লাগে ভূত প্রেত এগুলিকে দূরে সরাতে চান, তাহলে শ্বেত
লজ্জাবতী গাছের শিকড় অমাবস্যা শনি, মঙ্গলবার, তিন ধাতুর মাদুলিতে ভোরে ধারণ
করবেন। অমাবস্যা শনি, মঙ্গলবারে এই গাছের শিকরটি পূর্ব দিকে ফিরে দম বন্ধ করে
তুলবেন।
এর সঙ্গে আরও কয়েকটি গাছের শিকর দিলে তবে আরো ভালো কাজ হয়। যাদু টোনা থেকে
বাঁচার জন্য বা কেউ আপনাকে বারেবারে ক্ষতি করছে সে ক্ষেত্রেও লজ্জাবতী গাছের
শিকড় শনি মঙ্গলবার ব্যবহার করলে রেহাই পাওয়া যায়।
পুরুষ লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা
আমাদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছে যারা পুরুষ লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা সম্পর্কে
জানতে চান। আজকে আমি তাদের উদ্দেশ্যেই এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।
বন্ধুরা পুরুষ লজ্জাবতী অনেক আগে থেকেই আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে
আসছে।
এই লজ্জাবতীর যে গুনাগুন রয়েছে তা আজকে আমি বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে আসুন
জেনে নেই লজ্জাবতী কিভাবে রোগের জন্য ব্যবহার করা হয়।
- লজ্জাবতী সেবন করলে আপনার গ্রন্থির প্রদাহ হয় এবং যক্ষ্মা রোগের তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় লজ্জাবতী পাতার রস ১০ থেকে ২০ মিলি নিয়মিত খেলে গলগন্ডের জন্য অনেকটা উপকার পাওয়া যায়।
- আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে অনেক ঠান্ডা আবহাওয়া এসেছে আর এ সময় প্রতিটা মানুষেরই সর্দি কাশি সব সময় লেগেই থাকে। তবে আপনি চাইলে এই ঠান্ডার সময় লজ্জাবতী উদ্ভিদ দিয়ে চিকিৎসা করতে পারেন। বিশেষ করে লজ্জাবতীর মূল বিষে খেলে কাশি অনেকটা উপশম পাওয়া যায়।
- অনেক সময় দেখা যায় অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এবং প্যাকেটজাত খাবার বা বাইরের খাবার খাওয়ার ফলে কোনো না কোনো সংক্রমণের কারণে ডায়রিয়া হয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এই ধরনের সমস্যা এড়াতে আপনারা ঘরোয়া পদ্ধতিতে লজ্জাবতীর উদ্ভিদ দিয়ে চিকিৎসা করতে পারেন। ৩ গ্রাম লজ্জাবতীর মূলের গুড়া এবং তার সাথে দই মিশ্রণ করে খাওয়ালে রক্ত লাইরা থেকে উপশম পাওয়া যায়। এছাড়াও এক গ্লাস পানিতে ১০ গ্রাম লজ্জাবতীর মূলের ক্বাথ তৈরি করে সেটি সকালে এবং সন্ধ্যায় খেলে রক্ত ডায়রিয়া এবং ডায়াবেটিস থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
- অনেক সময় বিভিন্ন খাবার খাওয়ার ফলে বদহজমের সমস্যা হয়ে থাকে তবে বদহজম বা পেট ফাঁপা থেকে রেহাই পেতে লজ্জাবতী পাতার রস পাশ থেকে দশ মিলি খেলে অনেকটা উপশম পাওয়া যায় পাশাপাশি জ্বর-জোন্ডিস এবং সব ধরনের পিত্তজনিত রোগের সমাধানে লজ্জাবতী পাতার রস অত্যন্ত উপকারী।
- অতিরিক্ত মসলাদার খাবার খাওয়ার ফলে পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যায় আর এই সমস্যার কারণে মলত্যাগের সময় রক্তপাত হয়ে থাকে। এ সমস্যাটিকে বলা হয় ব্লাডি পাইলস। আর এটি থেকে রেহাই পেতে লজ্জাবতী ব্যবহার করা উচিত। এক চামচ লজ্জাবতী পাতার গুঁড়া এবং তার সঙ্গে দুধ মিশ্রণ করে দিনে তিনবার খেলে পাইলসের সমস্যা থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া যায়।
- অতিরিক্ত পরিমাণে প্রস্রাবের সমস্যা হলে লজ্জাবতীর পাতা পিষে খেলে মূত্রনালীর সমস্যা থেকেও অনেক উপকার পাওয়া যায়। তাই যাদের এ ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা চাইলে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
- পুরুষের অন্ডকোষে পানি ভর্তি হওয়ার কারণে হাইড্রোসিল রোগ হয়ে থাকে। তবে এই রোগ থেকে রেপে তে লজ্জাবতী ব্যবহার করলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। সেজন্য আপনাকে লজ্জাবতীর পাতা পিষে অন্ডকোষের ফলাতে লাগিয়ে রাখতে হবে তাহলে উপকার পাওয়া যাবে।
- অনেক মানুষ আলসার রোগে ভোগেন। তবে এই আলসার থেকে মুক্তি পেতে লজ্জাবতীর মূলের গুড়ো খেলে অনেকটা উপকার পাওয়া যায়। পাশাপাশি সাইনাসের ব্যাথা এবং অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিতেও অনেক বেশি সাহায্য করে লজ্জাবতী।
- প্রায় সময় বার্ধক্যর সাথে সাথে স্তন শিথিল হওয়ার সমস্যা দেখা যায়। তবে এই সমস্যা রাতে লজ্জাবতী ও অশ্বগন্ধার মূল বিষে পেস্ট করে লাগিয়ে রাখলে স্তন শিথিলতা অনেকটা কমে যায়।
- বিভিন্ন কারণে অনেক সময় শরীর ক্ষত হয়ে যায় তবে এই ক্ষতস্থানে আপনারা চাইলে লজ্জাবতীর মূল টেস্ট করে লাগিয়ে রাখতে পারেন। কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখলে অনেক উপশম পাওয়া যাবে।
পুরুষ লজ্জাবতী গাছ চেনার উপায়
লজ্জাবতী গাছ অনেক আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এর শাখার নিচের দিকে বাগা কাটা হয়ে থাকে এবং এর পাতা
যৌগিক পরক্ষণ স্পর্শ করলেই বিপরীত দিকে পাতাটি নেমে এসে জুড়ে যায়। এই লজ্জাবতী
গাছের ফুল অনেকটা বেগুনি লাল বর্ণের হয়ে থাকে।
বারো মাসেই ফুল ও ফল হয়ে থাকে। বিশেষ করে জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে
লজ্জাবতী গাছের ফুল ও ফল বেশি হয়ে থাকে। এর প্রচলিত নাম হল লজ্জাবতী বা লাজন্তী
এবং ইংরেজি নাম হলো Humble Plant, Sensitive Plant এবং বৈজ্ঞানিক নাম হলো Mimosa
pudica Linn. এই গাছটির পরিবারের নাম হলো Mimosaceae. এটি মূলত বাংলাদেশের
সর্বত্র বন্য অবস্থায় জন্মে থাকে।
এই পুরুষ লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা হলো অর্শ, আমাশয়, নালী ঘা ও পুরনো ক্ষত নিরসনে
উপকারী। বিশেষ করে এর মূল কার্যকারিতা হলো রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। আশা
করি পুরুষ লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা পাশাপাশি পুরুষ লজ্জাবতী গাছ চেনার উপায়
সম্পর্কেও সঠিকভাবে জানতে পেরেছেন।
সাদা লজ্জাবতী গাছের ছবি
আমাদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছে যারা সাদা লজ্জাবতী গাছ দেখতে কেমন হয় জানেন না।
তাই আজকে আমি সাদা লজ্জাবতী গাছের ছবি নিয়ে হাজির হয়েছি। আপনারা চাইলে নিম্নে
কিছু ছবি দেওয়া হয়েছে দেখে নিতে পারেন।
লেখকের মন্তব্য | পুরুষ লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা
প্রিয় পাঠক সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে আশা করি আপনারা সকলেই পুরুষ লজ্জাবতী গাছের
উপকারিতা এবং পুরুষ লজ্জাবতী গাছ চেনার উপায় সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পেরেছেন।
মূলত লজ্জাবতী প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুন হিসেবে ব্যবহৃত হয় আসছে।
আর এই ওষুধি গুনাগুন সম্পর্কে আশা করি আপনারা সকলেই জানতে পেরেছেন। তাই
আর্টিকেলটি আপনার যদি উপকৃত মনে হয় তাহলে অবশ্যই অন্যদের মাঝে শেয়ার করবেন।
এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url