ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
আপনি কি ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে এই আর্টিকেল একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। কারণ এই আর্টিকেলে আপনার ফর্সা হওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের টিপস দেয়া হয়েছে যা আপনার জন্য অনেক বেশি উপকৃত হবে। তাই আসুন আর দেরি না করে জেনে নিন।
শুধু তাই নয়, আপনি কিভাবে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে ঘরোয়া পদ্ধতিতে আপনার ত্বক ফর্সা করতে পারবেন তা সম্পূর্ণ এই আর্টিকেলে দেওয়া হয়েছে। ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফর্সা হওয়ার উপায় বিস্তারিত জানার জন্য আর্টিকেল সম্পূর্ণ ধৈর্য সহকারে পড়ুন।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফর্সা হওয়ার উপায়
কথায় আছে, মানুষ সৌন্দর্যের পূজারী। এজন্যই মানুষের সুন্দর ও ফর্সা হওয়ার পেছনে এতো ঝোঁক। উজ্জ্বল, ফর্সা এবং ইভেন স্কিন টোন কার না ভালো লাগে! কিন্তু আধুনিক জীবনের দৌড়ঝাঁপ এবং পলিউশনের মধ্যে ত্বকের ন্যাচারাল গ্লো অনেক সময় হারিয়ে যায়। তাহলে উপায়? আমাদের হাতের কাছের ঘরোয়া বিভিন্ন ন্যাচারাল ইনগ্রিডিয়েন্টস ব্যবহার করেই আমরা এই হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে পারি। যা আমাদের স্কিনকে ফর্সা করতে সাহায্য করবে।
ফর্সা হওয়ার ঘরোয়া উপায়
মনে পড়ে ছোটবেলার সেই দিনগুলোর কথা? যখন মা নিজের হাতে তৈরি মাস্ক এবং প্যাক মুখে লাগাতেন? আজও সেই প্রাচীন ঘরোয়া উপায়গুলো সমান ভাবেই কার্যকরী। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু প্রাকৃতিক ঘরোয়া টোটকা!
কফি ও মধু স্ক্রাব
কফি স্কিনের ডেড সেল দূর করে এবং মধু মুখকে মসৃন করে।
উপকরণঃ
- ১ টেবিল চামচ কফি
- ১-২ টেবিল চামচ মধু
প্রস্তুত প্রনালীঃ একটি বাটিতে কফি এবং মধু মিশিয়ে নিন। মুখে এপ্লাই করে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
মুলতানি মাটি ও গোলাপ জল
মুলতানি মাটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে এবং ভেতরে জমে থাকা পলিউশন, ডার্ট দূর করতে সাহায্য করে।
উপকরণঃ
- ২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি
- ১-২ টেবিল চামচ গোলাপ জল
প্রনালীঃ একটি পাত্রে মুলতানি মাটি এবং গোলাপ জল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন এবং প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আলুর রস
আলুর রসে রয়েছে প্রাকৃতিক ব্লিচিং যা ত্বকের দাগ কমাতে এবং ত্বককে ফর্সা করতে সহায়ক।
উপকরণঃ
- ১টি আলুর রস
দই ও মধু
দই এ রয়েছে ল্যাকটিক অ্যাসিড এবং মধুতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুন যা স্কিনকে করে স্মুথ এবং ব্রাইট।
উপকরণঃ
- ১ টেবিল চামচ দই
- ১ টেবিল চামচ মধু
প্রণালীঃ দই ও মধু মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
লেবুর রস ও মধু
মধু ত্বককে ময়েশ্চারাইজড করে এবং লেবুর রস ত্বকের ব্লিচিং হিসেবে কাজ করে।
উপকরণঃ
- ১ টেবিল চামচ লেবুর রস
- ১ টেবিল চামচ মধু
প্রণালীঃ লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন এবং মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন।
শসা ও দই প্যাক
শসা এবং দই স্কিনকে হাইড্রেট এবং নারিশ করে।
উপকরণঃ
- ১/২ কাপ শসার রস
- ১ টেবিল চামচ দই
প্রণালীঃ শসার রস ও দই মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন এবং মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন।
অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা জেল স্কিনকে ব্রাইট এবং রেজ্যুভিনেট করতে সাহায্য করে।
উপকরণঃ
- তাজা অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল সংগ্রহ করুন
প্রণালীঃ সরাসরি অ্যালোভেরা জেল মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন।
সতর্কতাঃ গাছের অ্যালোভেরা পাতা ডিরেক্ট মুখে লাগালে এনার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে ভালো ব্র্যান্ডের অ্যালোভেরা জেল কিনে লাগাতে পারেন৷
ওটমিল ও মধু স্ক্রাব
ওটমিল ত্বকের ডেড স্কিন সেল দূর করে এবং মধু মুখের কালো দাগ দূর করার পাশাপাশি মুখকে ময়েশ্চারাইজড করে।
উপকরণঃ
- ১ টেবিল চামচ ওটমিল
- ১ টেবিল চামচ মধু
প্রণালীঃ ওটমিল ও মধু মিশিয়ে প্রাকৃতিক স্ক্রাব তৈরি করে মুখে লাগান এবং ধীরে ধীরে মাসাজ করুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
হলুদ ও বেসন প্যাক
হলুদে রয়েছে এন্টি-অক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বককে ব্রাইট করতে সাহায্য করে।
উপকরণঃ
- ১ টেবিল চামচ বেসন
- ১ চিমটি হলুদ গুঁড়ো
- ১-২ টেবিল চামচ দুধ বা গোলাপ জল
প্রণালী: বেসন ও হলুদ মিশিয়ে দুধ বা গোলাপ জল দিয়ে প্যাক তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
টমেটোর রস
উপকরণঃ
- ১টি তাজা টমেটোর রস
প্রণালীঃ টমেটোর রস মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
সতর্কতাঃ যাদের এলার্জি রয়েছে তারা টমেটোর রস ডিরেক্ট মুখে লাগানোতে সতর্ক হোন।
বাদাম ও দুধ
দুধ স্কিনের ময়লা দূর করে অর্থাৎ টোনার হিসেবে কাজ করে।
উপকরণঃ
- বাদামের পেস্ট ১ চা চামচ
- দুধ ১-২ চা চামচ
প্রস্তুত প্রনালীঃ বাদামের পেস্ট এবং দুধ ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে এপ্লাই করুন।
কমলালেবুর খোসা পাউডার ও দই
কমলালেবুর খোসায় রয়েছে ভিটামিন সি। আর ভিটামিন সি ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
উপকরণঃ
- কমলালেবুর খোসা গুড়া ১ চা চামচ
- দই পরিমাণ মতো
প্রস্তুত প্রনালীঃ কমলালেবুর খোসা গুড়া এবং দই ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে এপ্লাই করুন। তারপর পানি দিয়ে ম্যাসাজ করে করে মুখ পরিষ্কার করুন। এটি স্কিনে স্ক্রাবিং এর কাজ করে।
ফর্সা হওয়ার খাবার
অনেক খাবার রয়েছে যা নিয়মিত খেলে প্রাকৃতিকভাবে স্কিন টোন অনেকটাই ফর্সা হয়। খাবারগুলো হলো:-
১) ফলমূল
কমলালেবুঃ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেলে ভেতর থেকে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
পেঁপেঃ পেঁপে এনজাইম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার, যা ত্বকের কালো দাগ কমায়।
স্ট্রবেরিঃ এতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ত্বককে ফর্সা করতে সহায়ক।
২) শাকসবজি
গাজরঃ এতে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন যা ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করে।
বিটরুটঃ এটি আমাদের রক্ত পরিষ্কার করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
টমেটোঃ এতে রয়েছে লাইকোপিন, যা ত্বকের কালচে ভাব কমাতে সাহায্য করে।
৩) প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
ডিমঃ ডিমে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন এবং বায়োটিন, যা ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখে।
মাছঃ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
বাদামঃ বাদামে রয়েছে ভিটামিন ই এবং বায়োটিন, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
৪) দুগ্ধজাত পণ্য
দুধঃ দুধে রয়েছে ল্যাকটিক অ্যাসিড, যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
দইঃ দই খুবই উপকারী ত্বকের জন্য। এতে রয়েছে ল্যাকটিক অ্যাসিড এবং প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ, যা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
৫) প্রচুর পানি পান
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। পানি ত্বকের ভিতর থেকে আর্দ্রতা যোগায় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৬) গ্রীন টি
গ্রীন টিতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
৭) লেবু
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবু ত্বকের কালচে ভাব দূর করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
৮) মিষ্টি আলু
এতে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন যা ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
৯) বাদাম ও সিডস
অ্যালমন্ড, সানফ্লাওয়ার সিড, চিয়া সিড এবং ফ্ল্যাক্স সিড ভিটামিন ই ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়ক।
১০) অলিভ ওয়েল
ভিটামিন ই ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ জলপাই তেল ত্বককে ফর্সা ও উজ্জ্বল করে।
এই পুষ্টিকর খাবারগুলো আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো সম্ভব।
টিপসঃ স্কিন কেয়ার শুরুর আগে অবশ্যই একটা ভালো মাইল্ড ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ ক্লিন করে মুখে প্যাক লাগানো উচিৎ। যাদের মুখে ব্রন তাদের স্যালিসাইলিক সমৃদ্ধ face wash দিয়ে ফেস ক্লিন করা উচিৎ।
উপসংহার | ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফর্সা হওয়ার উপায়
সৌন্দর্যের জন্য ফর্সা হওয়ার বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় যেমন কার্যকরী, তেমনি নিরাপদও। প্রাকৃতিক উপাদানগুলো সহজলভ্য এবং ত্বকের কোনো ক্ষতি না করেই উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে পারে। তবে যেকোনো নতুন প্যাক বা ইনগ্রিডিয়েন্ট ব্যবহারের আগে অবশ্যই একটি ছোট পরীক্ষা করা উচিত, যাতে ত্বকের সাথে মানিয়ে যাচ্ছে কি না বোঝা যায়। ত্বকের যত্নের পাশাপাশি সুষম খাদ্য এবং পর্যাপ্ত পানি পানও ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত যত্ন, পরিমিত ঘুম, সঠিক ডায়েট এবং মানসিক শান্তি আমাদের ত্বককে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url