হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান? আপনারা যারা এই বিষয়টি
সম্পর্কে জানতে চান তারা অবশ্যই এই আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন। এখানে একদম
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হাতিশুর গাছের কি কি উপকার রয়েছে এবং এটি কিভাবে খেলে
আপনার শরীরে জন্য উপকার মিলবে তা সম্পর্কে সঠিকভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তাই আপনারা
একদম নতুন তাঁরা অবশ্যই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
আপনারা যদি আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়তে পারেন তাহলে, লজ্জাবতী গাছের শিকড় কি
কাজে লাগে, কি গাছের শিকড় খেলে মানুষ পাগল হয়ে যায়, মান্দার গাছের শিকড় খেলে
কি হয়, লজ্জাবতী গাছ খাওয়ার নিয়ম, এই সকল বিষয়ে সঠিকভাবে জেনে যাবেন।
ভূমিকা
হাতিশুর গাছটি সাধারণত ঔষধিগুন সম্পন্ন একটি গাছ। হাতিশুর গাছের পাতা ও শিকড়
দিয়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা হয়। গ্রাম অঞ্চলের ঝোপঝাড়ে বা রাস্তার সাইডে
হাতিশুর গাছ দেখা যায়। অনেক সময় এই গাছটি খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল হয়ে যায়।
বিশেষ করে মানুষের শরীরের উপকারিতার জন্য এই হাতিশুরের পাতা ও গাছ অত্যন্ত
উপকারী। বিশেষজ্ঞ বলেন হাতিশুর গাছটির পাতা ও শিকড় মানুষের শরীরের বিভিন্ন
সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। অনেকে রয়েছে হাতিশুর গাছ কিভাবে খাবে সেই নিয়ম
জানে না। তাই আজকে আমি আপনাদের সুবিধার্থে হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম এবং
হাতিশুর গাছের কি উপকার রয়েছে তা বিস্তারিত এই আর্টিকেলের মাধ্যমে তুলে ধরেছি।
আশা করি আপনাদের জন্য এই আর্টিকেলটি অনেক উপকারী হবে। তাই আসুন আর দেরি না করে
জেনে নিন।
লজ্জাবতী গাছ খাওয়ার নিয়ম
অনেকেই লজ্জাবতী গাছের স্পর্শে পাতা মুড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।
কিন্তু এই গাছের শুধু সৌন্দর্যই নয়, এর রয়েছে অসংখ্য ঔষধি গুণ। তবে প্রশ্ন হলো,
এই গাছ কি খাওয়া যায়? বা লজ্জাবতী গাছ খাওয়ার নিয়ম কি? চলুন আজকে আমরা এই
সমস্ত প্রশ্নের সঠিক উত্তর জেনে নিই।
মূলত লজ্জাবতী গাছের কিছু অংশ খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে এর পাতা ও
শিকড়। তবে যেকোনো উদ্ভিদই খাওয়ার আগে ভালো করে জেনে নেওয়া জরুরি। লজ্জাবতী
গাছের পাতা সাধারণত সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এটি সালাদ, স্যুপ বা অন্যান্য খাবারে যোগ করা হয়। লজ্জাবতী গাছের শিকড় কিছু
দেশে ঐতিহ্যগত ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত শুকিয়ে গুঁড়ো করে খাওয়া
হয়। এছাড়াও এই লজ্জাবতী গাছের আরো অনেক উপকার ও খাওয়ার নিয়ম রয়েছে চলুন
সেগুলোও জেনে নিন।
হাত-পা জ্বালা ভালো করেঃ লজ্জাবতী গাছের যে মূল পাতা রয়েছে সেটি
আপনি যদি খেতে পারেন তাহলে আশা করি অনেক উপকার মিলবে। মূলত এই লজ্জাবতী গাছের
পাতা ১০ গ্রাম নিয়ে চার কাপ পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। এরপর এক কাপ থাকতেই নামিয়ে
সেটি সুন্দর করে ভালো একটি পাত্রে থেকে সেবন করলে আশা করি হাত পা জ্বালা থেকে
রেহাই পাবেন।
আমাশয়ঃ আমাশয় ভোগেন না এমন মানুষ খুব কমই দেখা যায়। বিশেষ করে ছোট
বাচ্চাদের এই সমস্যাটা হওয়া অনেক বেশি দেখা যায়। তবে এই সময় লজ্জাবতীর ডাঁটার
পাতা ১০ গ্রাম সুন্দর করে সিদ্ধ করে ছেকে খেতে পারলে আশা করি অনেক উপকার
মিলবে।
আর যে সকল মানুষদের আমযুক্ত গাজলা দাস্ত হয় তারা শুধু পাঁচ গ্রাম অথবা ৬ গ্রাম
সেদ্ধ করে থেকে ওই পানি খেলে অনেক উপকার মিলবে। তাই দেরি না করে যাদের এই
সমস্যাগুলো রয়েছে তারা লজ্জাবতীর ডাটার পাতা খেয়ে সুস্থ হতে পারেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করেঃ অনেকেরই কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা
রয়েছে তবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন লজ্জাবতী গাছের মূল ৮ গ্রাম
থেঁতো করে সেদ্ধ করতে হবে। এরপর সুন্দর করে ভালো একটি পাত্রে থেকে সেই পানিটি
খেতে হবে তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
অর্শ্ব রোগ ভালো করতে সাহায্য করেঃ অনেক মানুষের অর্শ্ব রোগ রয়েছে।
আর এই রোগটি দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা করে থাকেন। তবে আপনারা লজ্জাবতী
গাছ ও মূল ব্যবহার করে এই রোগটি আল্লাহর রহমতে ভালো করতে পারেন।
অর্শ্ব রোগ ভালো করার জন্য আপনাকে প্রথমে লজ্জাবতী গাছের মূল ১০ গ্রাম নিতে হবে।
এরপর ১ কাপ দুধ এবং ৩ কাপ পানি একসঙ্গে মিশ্রণ করে সিদ্ধ করে নিতে হবে। সিদ্ধ
করতে করতে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে পরিষ্কার পাত্রে থেকে নিতে হবে। এরপর প্রতিদিন
সকালে এবং বিকেলে ২ বার খেতে হবে।
ঘামের দুর্গন্ধ দূর করেঃ অনেকেরই ঘামের দুর্গন্ধ হয়। আর এই
দুর্গন্ধের কারণে অনেকেই লজ্জায় কোথাও যেতে চান না। বিভিন্ন ধরনের উপায় অবলম্বন
করেও অনেকে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে পারেন না। তবে আপনাদের আজকে আমি এমন কিছু
টিপস দেব যেগুলো অবলম্বন করলে আশা করি আপনার ঘামের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে।
ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য প্রথমে আপনাকে লজ্জাবতী গাছের ডাটা ও পাতার থেঁতো
করে এক ধরনের পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এরপর আপনার বগলে এবং শরীরে ভালোভাবে
মাখিয়ে নিতে হবে। তাহলে আপনার ঘামের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে।
নাড়ি সরে আসাঃ অনেক গর্ভবতী মায়েরা সন্তান প্রসবের সময় অসাবধানতার
কারণে নারী সরে যায়। অজু হয়ে বসতে গেলে অসস্তিবোধ করে। এই ধরনের সমস্যায়
লজ্জাবতীর গাছপাতা খুবই উপকারী। ১০ গ্রাম আন্দাজ করে গাছপাতা নিবেন।
এরপর ৪ কাপ পানি দিয়ে ভালো করে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে থেকে নিবেন। এরপর
প্রতিদিন সকালে ও বিকালে ২ বার খেলে আশা করি আপনার এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে ।
দাতেঁর মাঢ়ির ক্ষত সাড়াতেঃ অনেকেরই দাঁতের মাড়ি ক্ষত হয়ে থাকে। এই
ক্ষত সারাতে অনেক ডাক্তারের কাছে যেয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করতে হয়। তবে আপনি
চাইলে প্রাকৃতিক উপায়ে দাঁতের মাড়ি ক্ষত সারাতে পারবেন।
সেজন্য আপনার প্রয়োজন পড়বে লজ্জাবতী গাছের মূল অর্থাৎ শিকড়। মূলত ১৫ থেকে ২০
সেন্টিমিটার লম্বা লজ্জাবতী গাছের মূল পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে কয়েক দিন
৩ থেকে ৪ বার কুলকুছা করতে পারলে দাঁতের মাড়ির ক্ষত দূর হয়ে যাবে।
পাইলস্ ও ফিস্টুলা আরাম পেতেঃ অনেকের পাইলস্ ও ফিস্টুলা মতো সমস্যা
হয়ে থাকে। আর এই সমস্যা দূর করার জন্য সাদা ফুলের লজ্জাবতীর পাতা ও মূল ভালোভাবে
পিষে রস বের করে প্রতিদিন খেতে পারলে পাইলস্ ও ফিস্টুলা অনেক বেশি আরাম পাওয়া
যায়। তাই আপনাদের যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারা আশা করি এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে
পারেন।
যৌনি ক্ষত থেকে মুক্তিঃ অনেক মেয়েদের যোনি পথে ক্ষত হলে প্রাথমিক
স্তরে প্রায় সময়ই অল্প স্রাব চলতে থাকে। খুবই বাজে গন্ধ হয়ে থাকে। কখনো বা
একটু লালচে স্রাব হয়। এই সময় চিকিৎসকরা সাবধান করে থাকেন। কারণ এটির পরিণামে
আপনার ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে। তবে এই সমস্যা থেকে আপনারা মুক্তি পাবেন কিভাবে
সেটা অবশ্যই জানা জরুরী।
যোনিপথের ক্ষত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে লজ্জাবতীর কাথ দিনে দুইবার
দুধ বা পানি দিয়ে খেলে এই রোগ থেকে উপশম পাওয়া যায়। একই সাথে লজ্জাবতীর ক্বাথ
দিয়ে যোনিপথ ভালোভাবে ধুলে তাড়াতাড়ি যোনিপথের ক্ষত সেরে যায়। তাই যে সকল
মেয়েদের এই সমস্যাগুলো রয়েছে তারা অবশ্যই এই পদ্ধতি অবলম্বন করবেন।
মান্দার গাছের শিকড় খেলে কি হয়
মান্দার গাছ বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে একটি পরিচিত গাছ। এর সৌন্দর্য ও ধর্মীয়
গুরুত্বের পাশাপাশি, এর শিকড় নিয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে। লোকমুখে প্রচলিত
আছে যে মান্দার গাছের শিকড়ের বিভিন্ন ঔষধি গুণ রয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞান কী বলে?
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেঃ
বর্তমানে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণায় মান্দার গাছের শিকড়ের নির্দিষ্ট কোনো ঔষধি
গুণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, মান্দার গাছের শিকড় খেলে শরীরে কী প্রভাব
পড়ে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য নেই।
লোকমুখে প্রচলিত ধারণাঃ
ধর্মীয় বিশ্বাসঃ অনেক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মান্দার গাছের শিকড়
ব্যবহৃত হয়।
স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ লোকমুখে প্রচলিত আছে যে মান্দার গাছের শিকড়
পেটের সমস্যা, শক্তিহীনতা ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে।
সতর্কতাঃ
- কোনো নির্দিষ্ট গবেষণা ছাড়া মান্দার গাছের শিকড় খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
- কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এটি অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
ডাক্তারের পরামর্শঃ কোনো ধরনের ঔষধি গাছ বা এর অংশ খাওয়ার আগে
অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম
হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা যদি না জেনে থাকেন তাহলে
অবশ্যই এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিন। কারণ আজকে আমি এই আর্টিকেলে এমন কিছু টিপস
সম্পর্কে আলোচনা করব যা আপনার শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরা হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানেন
না। তাই যারা জানেন না তারা অবশ্যই জেনে নিন।
- প্রথমত হাতিশুর গাছের শিকড় খেতে হলে আপনাকে হাতিশুর গাছ সংগ্রহ করতে হবে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন গাছটি যেন প্রাপ্তবয়স্ক হয়। এখন আপনারা অনেকেই বলবেন প্রাপ্তবয়স্ক গাছ কিভাবে চিনবো? প্রাপ্তবয়স্ক গাছ বোঝার জন্য আপনাকে প্রথমত গাছের ফুল দেখতে হবে।
- হাতিশুর গাছ যেগুলো প্রাপ্ত বয়স্ক সেগুলোতে ফুল ফুটে এবং সেই ফুলগুলো সাদা রঙের হয়ে যায়। এইরকম হাতিশুর গাছ দেখলে সেটি সংগ্রহ করবেন। (হাতিশুর গাছ বড় হতে সর্বোচ্চ ২ থেকে তিন মাস সময় লাগে)
- সংগ্রহ করা হয়ে গেলে হাতিশুর গাছের মূল ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর হাতিশুর গাছ দিয়ে ওষুধ বানানোর জন্য ৪ টি উপাদান প্রয়োজন পড়বে। ১) প্রচুর প্রাপ্তবয়স্ক হাতিশুর গাছ, ২) কালোজিরা, ৩) মধু, ৪) পান।
- তবে এই সকল উপাদান গুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর পান, হাতিশুরের গাছের শিকড় 1 ইঞ্চি, ১ চামচ মধু ও ১ চিমটি কালোজিরা দিয়ে যেভাবে বাজারে পান কিনে চিবিয়ে খান ঠিক সেই রকম ভাবেই ঘুমানোর এক ঘন্টা আগে খেতে হবে।
- এতে করে আপনি ভালো ফলাফল পাবেন। এর থেকেও আরো ভালো ফলাফল পেতে চাইলে প্রতিদিন রাতে ১ বার করে এক সপ্তাহ খেতে পারলে অনেক বেশি উপকার পাবেন।
- যদি আপনার শরীরের কোন জায়গা ফুলে যায় তাহলে হাতিশুর গাছের শিকড় থেত করে রস বের করে হালকা কুসুম গরম পানিতে সেদ্ধ করে খেলে ফুলে যাওয়া জায়গাটা কমে যায়।
- হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম হলো, অনেক বেশি ঠান্ডা, জ্বর, কাশি, হলে হাতিশুর গাছের শিকড় গরম পানিতে ফুটিয়ে পরবর্তীতে ঠান্ডা হয়ে গেলে সেটি খেলে ঠান্ডা, জ্বর, কাশি, এগুলো সবকিছুই সেরে যায়।
- এছাড়াও শরীরের কোন জায়গায় অনেক গুরুতর আঘাত লাগলে, হাতিশুর গাছের শিকড় থেঁতো করে সেই আঘাত স্থানে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখলে ব্যথা কমে যায়।
- এছাড়াও আপনার শরীরে কোন অংশে যদি কোন বিষাক্ত পোকামাকড় কামড় দিয়ে থাকে, তাহলে হাতে সুর গাছের পাতাভালোভাবে থেঁতো করে নিয়ে সেই জ্বালাপোড়া স্থানে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখলে জ্বালাপোড়া আস্তে আস্তে কমে যায়।
এগুলো ছাড়াও যৌন রোগের জন্যও হাতিশুর গাছের শিকড় খুবই উপকারী। চলুন এবার
জেনে নেয়া যাক যৌন রোগের সমস্যা দূর করতে হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার
নিয়মঃ
- যৌন রোগের সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন সকালে উঠে ২৫০ গ্রাম অর্থাৎ ১ পোয়া পানি পান করতে হবে।
- এরপর হাতিশুর গাছের শিকড় ২ ইঞ্চি পরিমাণ নিয়ে মধুর সাথে মিশ্রণ করে চিবিয়ে রস খেয়ে ফেলবেন।
- তবে অবশ্যই আপনাকে মনে রাখতে হবে প্রতিদিন হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার আগে ১ পোয়া পানি পান করতে হবে। তারপরেই হাতিশুরের শিকড় খাবেন তাহলে অনেক বেশি উপকার পাবেন।
- হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার পরে এক ঘন্টার ভেতর কোনো খাবার গ্রহণ করবেন না।
- মূলত সকালে হাতিশুর গাছের শিকড় খেতে বলছি তার কারণ হলো সকালে খালি পেটে খেলে যৌন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
তাই প্রতিদিন নিয়ম করে হাতিশুর গাছের শিকড় খেলে আপনার যৌন রোগের যে সমস্যা
রয়েছে সেগুলো আল্লাহর রহমতে দূর হয়ে যাবে। আশা করি হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার
নিয়ম সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পেরেছেন। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক হাতিশুর গাছের
কি উপকার রয়েছে সেই সম্পর্কে।
হাতিশুর গাছের কি উপকার
ঝোপঝাড়ে কিংবা পুরনো বাড়ি বা রাস্তার ধারে হাতিশুর গাছটি দেখা যায়। এই গাছটির
ফুল সাদা বর্ণের হয়ে থাকে। কুচকুচে সুন্দর এই গাছটি মোটামুটি এক দেড় ফুট লম্বা
হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো হেলিওট্রোপিয়াম ইনডিকাম (Heliotropium indicum) এবং এর ইংরেজি নাম হলো Indian heliotrope।
হাতিশুর গাছের উপকারিতা
- শরীরে কোন অংশে যদি ফোলা থাকে তাহলে হাতিশুর গাছের পাতা বেটে হালকা কুসুম গরম করে ফোলায় লাগালে ফোলা কমে যায়।
- যদি শরীরে কোন কিছুর আঘাত লেগে ফুলে যায় বা ব্যথা হয় সেই অংশে হাতিশুর গাছের পাতা বেটে হালকা কুসুম গরম করে লাগিয়ে রাখলে ফোলা এবং ব্যথা কমে যায়।
- আজকাল অধিকাংশ মানুষেরই টাইফয়েড রোগ হয়ে থাকে। এই টাইফয়েড রোগ দূর করার জন্য হাতিশুরের গাছের পাতার রস হালকা কুসুম গরম পানিতে মিশ্রণ করে খেলে টাইফয়েড জ্বর অনেকটা ভালো হয়ে যায়।
- শরীরে ছত্রাক জনিত কোন লাল চাকা চাকা দাগ হলে হাতিশুর গাছের পাতার রস থেঁতো করে লাল চাকা চাকা দাগগুলোতে লাগিয়ে রাখলে অনেকটা আরাম মিলে।
- এছাড়াও শরীরে জ্বর ও কাশি হলে হাতিশুর গাছের শিকড় গরম পানি দিয়ে ফুটিয়ে ক্বাথও তৈরি করে ব্যবহার করলে অনেকটাই জ্বর ও কাশি ভালো হয়।
- শরীরে কোন অংশ যদি কেটে যায়, তাহলে সেই স্থানে হাতিশুর পাতা থেঁতো করে রস বের করে সেই কাটা
- ছেঁড়া জায়গায় দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে অনেক বেশি আরাম পাওয়া যায়।
- শরীরে বিষাক্ত কোন পোকামাকড় কামড় দিলে সেই জ্বালাপোড়া ও ফোলা স্থানে হাতিশুর গাছের পাতার রস কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখলে জ্বালাপোড়া ও ফোলা ভাব কমে যায়।
- যাদের ঘনঘন সর্দি লাগে তারা হাতিশুর পাতা রস করে দুই চামচ পরিমাণ রস খেতে পারেন। এতে করে আপনার সর্দি ভালো হবে।
- যে সকল ভাই ও বোনেরা একজিমাতে ভুগছেন। তারা একজিমা থেকে মুক্তি পেতে হাতিশুর গাছের পাতা থেঁতো করে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন। এইভাবে কিছুদিন ব্যবহার করার ফলে আশা করি আপনার একজিমা ভালো হয়ে যাবে।
- বর্তমান সময়ে ছেলে হোক কিংবা মেয়ে হোক ব্রণের সমস্যা দেখা দিবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অতিরিক্তভাবে মুখে ব্রণ বের হয়ে দাগ হয়ে গেলে সেই দাগগুলো হাতিশুর গাছের পাতা ও কচি ডাল ব্যবহারের মাধ্যমে দূর হয়ে যাবে। সেজন্য আপনাকে প্রথমে হাতিশুর গাছের পাতা ও তার কচি ডাল থেঁতো করে নিতে হবে। এরপর গোসল করতে যাওয়ার এক ঘন্টা আগে মুখের ব্রণের ওপর ভালোভাবে লাগিয়ে রাখুন। এভাবে কিছুদিন লাগিয়ে রাখলে আপনার মুখের ব্রণ ও দাগ দূর হয়ে যাবে।
- যে সকল ভাই ও বোনরা দাঁতের মাড়ি ফোলা রোগে আক্রান্ত রয়েছেন তারা হাতিশুরের শিকড় চিবিয়ে খেতে পারেন। যদিও এটি আপনার পক্ষে কষ্টকর তারপরেও খেতে পারলে দাঁতের মাড়ি ফোলা অনেক কমে যাবে।
- হাতিশুর পাতা সাধারণত রস করে বা গুঁড়ো করে খাওয়া হয়। তবে কোনো ধরনের ঔষধি গাছ বা এর অংশ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আশা করি হাতিশুর গাছের কি উপকার সেটা সঠিকভাবে জানতে পেরেছেন।
কি গাছের শিকড় খেলে মানুষ পাগল হয়ে যায়
গ্রাম অঞ্চলের ঝোপ ঝাড়ে যে গাছটিকে ভয় বিষের চেয়েও কম নয় এর নাম ধুতুরা। এই
গাছটি মানুষ খেলে অজ্ঞান ও পাগল হয় তা অনেকেই জানেন। এই গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম হল
ধুতুরা মিটিল। এটি মূলত গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। আর এটি খাওয়ার ফলে পশুপাখি ও
মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এই ফুলটি দেখতে অনেক সুন্দর হলেও এটি আপনাকে অজ্ঞান করা, পাগল করা সহ মৃত্যুর কলে
ঢলে দিতে পারে। তাই এই ফুলটি ভুল করেও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ ছাড়া কখনোই
খাবেন না। আশা করি বুঝতে পেরেছেন। এর নিচে আরেকটি ছবি দেওয়া হবে যেই ছবিটির সাথে
আমরা সকলেই পরিচিত। আমি সেই ধুতরা ফলের কথা বলছি।
ছবিটিতে ধুতুরা ফল দেখানো হয়েছে। এই ফলটি আমরা ছোটবেলায় বন্ধু বান্ধবীর চুলে
লাগিয়ে দুষ্টামি করতাম। কিন্তু আপনারা জানলে অবাক হবেন ধুতুরা ফলে অ্যাট্রোপিন,
হায়োসাইসামিন, স্কোপোলামাইন থাকে। এই সকল পদার্থগুলো মিশ্রণ থাকার কারণে ধুতরা
ফল খুবই মারাত্মক হয়ে থাকে। বিশেষ করেস্কোপোলামাইন এর কারণে মানুষ অজ্ঞান হয়ে
যাওয়া, হ্যালুসিনেশন হয়ে যাওয়া এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
বর্তমানে বিশেষজ্ঞমতে ধুতুরা এবং মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়। এই ধুতুরা ফলটি
বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ শ্বাসকষ্ট, বায়ুবর্ধক, জ্বর,
পাঁচড়া, ক্লান্তিবর্ধক, চুলকানি, ব্রণ নাশক, উষ্ণবীর্য, বেদনানাশক, ভ্রমকারক,
মূত্রকর, নিদ্রাকারক, কটুরস, মূর্ছাকারকসহ আরো অনেক রোগের ওষুধ হিসেবে ধুতুরা
ফলটি ব্যবহৃত হয়।
ধুতুরা পাতার রস মাথার তুলে মাখলে উকুন থাকলে মরে যায়, শরীরের কোন জায়গায়
ব্যাথা লাগলে ধুতুরা পাতার রস দিলে উপশম পাওয়া যায়, চর্মরোগ ভালো হয়, টিউমার
সহ বহু রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় ধুতুরা।
সাবধানতাঃ ধুতুরা ফলটি অভিজ্ঞ কবিরাজের পরামর্শ ছাড়া কখনোই খাওয়া
উচিত নয়। বিশেষ করে কোন গাছের অংশই খাওয়া উচিত নয় অভিজ্ঞ কবিরাজের পরামর্শ
ছাড়া। বিশেষ করে কাঁচা ফল খুবই বিষাক্তকর হয়ে থাকে। আর এটি অতিরিক্ত খেলে
মস্তিষ্কের অনেক বড় ধরনের ক্ষতি হয়। এই ধুতুরা ফলটিতে (tropane alkaloids) নামক মারাত্মক বিষ আছে।
এই গাছের বিষক্রিয়ায় পশুপাখি বা মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। অন্যান্য
দেশগুলোতে ধুতুরা গাছ বিপনন ও বহন আইনত নিষিদ্ধ। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ
বাংলাদেশে ধুতুরা বিষে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাই এই ফলটি খাওয়ার আগে অবশ্যই
অভিজ্ঞ কবিরাজের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
লজ্জাবতী গাছের শিকড় কি কাজে লাগে
লজ্জাবতী গাছের শিকড় কি কাজে লাগে এ বিষয়টি সম্পর্কে আজকে আমি এই আর্টিকেলে
আলোচনা করব। আপনার অনেকেই লজ্জাবতী গাছ চিনে থাকেন কিন্তু এই গাছের শিকড় আমাদের
কি কাজে প্রয়োজন হয় তা অনেকেই জানেন না। তাই আসুন আমরা সঠিকভাবে জেনে নেই।
লজ্জাবতী গাছের শিকড় ও পাতা পিষে পেস্ট করে ত্বকে লাগিয়ে রাখলে ত্বকের চামড়া
অনেক টানটান থাকে। মূলত লজ্জাবতী গাছের পাতা সর্দি কাশি এগুলো দূর করতে সাহায্য
করে। আয়ুর্বেদে বলা হয়েছে লজ্জাবতী পাতা সকালে আপনি যদি চিবিয়ে খেতে পারেন
তাহলে অনেক বেশি উপকার মিলবে।
এছাড়াও পাইলস এবং রক্তপাতের মতো সমস্যা দূর করতেও অনেক বেশি সাহায্য করে
লজ্জাবতী গাছের পাতা ও শিকড়। তবে একটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন লজ্জাবতী গাছের
শিকড় ও পাতা খাওয়ার আগে ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
এছাড়াও এটি ব্যবহার করার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ কবিরাজের পরামর্শ নিন। কারণ
সকলের জন্য লজ্জাবতী গাছের পাতা ও শিকড় সমান নয় তাই আপনাকে সবার আগে জেনে
নেওয়া উচিত।
লেখকের শেষ কথা | হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ে আশা করি হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম
এবং হাতিশুর গাছের কি উপকার সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পেরেছেন। এই বিষয়টি আপনাদের
জ্ঞান অর্জন করার জন্য আজকে আমি এই আর্টিকেলে সঠিকভাবে তুলে ধরেছি। তাই আপনারা
যদি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে একটুও উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আমাদের এই
পোস্টের বিষয়ে একটি কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।
আর অবশ্যই আপনাদের বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করবেন। এরকম আরো পোস্ট পেতে
আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন। আর সর্বশেষে বলতে চাই আর্টিকেলটি শেষ
পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url