নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন কীভাবে? জেনে নিন
অনেক মানুষ রয়েছে যারা নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবে কীভাবে সেটা সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না। তাই আপনারা যারা কীভাবে নতুন জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে জানেন না তারা আজকের এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিন। আজকে আমরা এই আর্টিকেলে এই বিষয়টি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব। তাই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ
আপনারা যদি আর্টিকেল শেষ পর্যন্ত পড়তে পারেন তাহলে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে পারবেন যা আপনার জন্য অনেক কাজে দিবে। যেমন- অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন তথ্য না পেলে করণীয়, বড়দের জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে, অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই, এই সকল বিষয়ে জানতে পারবেন।
ভূমিকা
অনেকে রয়েছে যারা নতুন জন্ম নিবন্ধন অনলাইনের মাধ্যমে করতে চান কিন্তু কিভাবে তারা করবে সে উপায় সম্পর্কে জানেন না। তাই আজকে আমি এই আর্টিকেলে নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন কিভাবে এবং বড়দের জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিকভাবে জানিয়ে দিবো। এছাড়াও এই আর্টিকেলে আরো বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে যা আপনার জন্য অনেক কাজে দেবে। তাই আশা করি এই আর্টিকেল আপনারা সবাই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়বেন। বিশেষ করে যাদের নতুন জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে মাধ্যমে করার প্রয়োজন তারা অবশ্যই এ আর্টিকেল ধৈর্য সহকারে পড়বেন। আসুন তাহলে আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক।
অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই
আপনি কি আপনার বা আপনার পরিবারের কোনো সদস্যের জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে যাচাই করতে চান? এটি এখন খুব সহজ একটি কাজ। বাংলাদেশ সরকার অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন যাচাই করার সুবিধা দিয়েছে। তাই কীভাবে আপনি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করবেন সেই উপায় এই ব্লগে জানিয়ে দেওয়া হবে। তাই আসুন তাহলে আর দেরি না করে জেনে নিন।
কীভাবে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করবেন?
ওয়েবসাইটে ভিজিট করুনঃ সবার আগে আপনাকে বাংলাদেশ সরকারের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে যেতে হবে। এই ওয়েবসাইটটিতে আপনি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন। ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলোঃ https://everify.bdris.gov.bd/
এরপরে আপনার বা যার জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে চান তার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ১৭ ডিজিটের সঠিকভাবে দিন। তারপর YYYY-MM-DD ফরম্যাটে জন্ম তারিখ লিখুন। এরপরে নিরাপত্তার জন্য দেওয়া ক্যাপচা লিখুন। সব তথ্য সঠিকভাবে দিয়ে সার্চ বাটনে ক্লিক করুন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আপনি জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কিত সব তথ্য পেয়ে যাবেন। আপনি চাইলে এই তথ্যটি প্রিন্ট করে রাখতে পারেন বা PDF ফরম্যাটে ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করতে পারেন। আশা করি বিষয়টি সঠিকভাবে বোঝাতে পেরেছি।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন তথ্য না পেলে করণীয়
বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে গেলে মাঝে মাঝে (No Result Found) লেখা দেখায়। এটি দেখানোর কারণ অনেকেই জানেন না। তাই খুব হতাশ হয়ে পড়েন। কিন্তু আমি আজকে আপনাদেরকে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন তথ্য না পেলে করণীয় কি সে বিষয়টি সম্পর্কে জানিয়ে দেব। তাই চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনারা যারা এই সমস্যায় হতাশ হয়ে আছেন তারা এই ব্লগের সাথেই থাকুন। আশা করি সম্পূর্ণ পড়লে সঠিক তথ্য পেয়ে যাবেন।
মূলত জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভারে শুধুমাত্র যেগুলো ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে সেই তথ্যগুলো আপলোড করা হয়েছে। পুরাতন যে হাতের লেখা নিবন্ধন তথ্য অথবা ১৬ ডিজিটের জন্ম সনদ তথ্য অনলাইনে লিপিবদ্ধ নেই। বিশেষ করে ২০০১ সালের পূর্বে যাদের নিবন্ধন হয়েছে তাদের পুরাতন হাতের লেখার জন্ম নিবন্ধন হলে সেটা (bdris) সার্ভারে পাওয়া যায় না।
যার কারণে আপনারা সার্ভারে তথ্য অনুসন্ধান করলে “No Record Found” লেখা দেখায়। এছাড়াও সার্ভারে বিভিন্ন সমস্যার কারণে অনলাইনে জন্ম সনদের তথ্য পাওয়া যায় না। আপনি যদি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন চেক করার পর (No Record Found) লেখাটি দেখানো হয়। তাহলে অবশ্যই আপনাকে চেক করে দেখতে হবে আপনার নিবন্ধন কোড সঠিক আছে কিনা।
অথবা জন্ম সনদ সঠিক আছে কিনা। এরপর আপনাকে দেখতে হবে জন্ম তারিখ লেখার যে ফরমেট রয়েছে অর্থাৎ YYYY-MM-DD (বছর-মাস-দিন) এই ফরমেটে দেওয়া তথ্য সঠিক আছে কিনা এবং ১৭ ডিজিটের যে নিবন্ধন কোড রয়েছে সেটা সঠিক আছে কিনা।
এই সমস্ত তথ্যগুলো যদি সঠিক দিয়ে সাবমিট করে যদি না আসে তাহলে হয়তো আপনার সনটটি অনলাইনে নিবন্ধন করা নেই। সেক্ষেত্রে আপনাকে দ্রুত সমাধানের জন্য আপনার নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা কার্যালয় অথবা সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলরে যেয়ে দ্রুত যোগাযোগ করুন।
নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন কীভাবে?
বাংলাদেশে নবজাতকের জন্ম নিবন্ধন করা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক। জন্ম নিবন্ধন একটি শিশুর আনুষ্ঠানিক পরিচয়পত্র। এটি শিশুর ভবিষ্যতে বিভিন্ন কাজে, যেমন স্কুলে ভর্তি, পাসপোর্ট তৈরি, ভোটার আইডি কার্ড তৈরি ইত্যাদিতে প্রয়োজন হতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নতুন জন্ম নিবন্ধনের কার্ড তৈরি করে নেওয়া উচিত। তাহলে চলুন নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন কিভাবে সেই উপায় সম্পর্কে জেনে নিন।
১) জন্ম নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
- শিশুর জন্মের সনদঃ হাসপাতাল বা মাতৃসদনে জন্মের সময় দেওয়া যে সনদ রয়েছে সেটা দিন।
- বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রঃ সঠিকভাবে পূরণ করা জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- বাবা-মায়ের বিবাহ নিবন্ধনঃ যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন, তাহলে বিবাহ নিবন্ধনের ফটোকপি।
- সাক্ষীর জাতীয় পরিচয়পত্রঃ দুইজন সাক্ষীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- বাসস্থানের প্রমাণঃ বাবা-মায়ের বাসস্থানের প্রমাণ (যেমন, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল ইত্যাদি এবং নির্ধারিত ফি পরিশোধের রশিদ।
২) আবেদনের পদ্ধতিঃ
- অনলাইনে আবেদনঃ বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। এই পদ্ধতি সবচেয়ে সহজ এবং দ্রুত।
- ওয়ার্ড অফিসে আবেদনঃ এছাড়াও আপনি চাইলে আপনার নিকটস্থ ওয়ার্ড অফিসে গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করে জমা দিতে পারেন। আথবা উপজেলা নিবন্ধন কার্যালয়ে গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করে জমা দিতে পারেন।
৩) আবেদনের সময়ঃ
শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে, এই সময়ের পরেও আবেদন করা যাবে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি দিতে হতে পারে। বিষয়টি মাথায় রাখবেন।
৪) জন্ম নিবন্ধনের গুরুত্বঃ
- শিশুর আইনগত পরিচয়ঃ জন্ম নিবন্ধন শিশুর আইনগত পরিচয়ের প্রমাণ।
- শিক্ষা ও চাকরির সুযোগঃ স্কুলে ভর্তি, পাসপোর্ট তৈরি, চাকরির জন্য আবেদন ইত্যাদিতে জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন।
- স্বাস্থ্যসেবাঃ সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়ার জন্য জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন।
- সামাজিক সুরক্ষাঃ বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন।
মনে রাখবেনঃ
- আবেদনের সময় সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে হবে।
- কোনো ধরনের জালিয়াতি করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।
- আপনার আরো কোনো প্রশ্ন থাকলে দ্বিধা করবেন না, জানিয়ে দিন।
আপনি যেখানে থাকেন সেখানকার ওয়ার্ড অফিস বা উপজেলা নিবন্ধন কার্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে আরো বিস্তারিত তথ্য পেতে পারেন। আশা করি এই তথ্য আপনার জন্য উপকারী হবে। আশা করি নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন কীভাবে এই বিষয়টি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পেরেছেন।
বড়দের জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে
বড়দের জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে এই বিষয়টি সম্পর্কে যদি আপনার জানা না থাকে তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই। আজকে আমি এই আর্টিকেলে এই বিষয়টি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। তাই আপনারা যারা এ বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না তারা অবশ্যই এই আর্টিকেল এর অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়ুন। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক।
৪৫ দিন থেকে ৫ বছর শিশুদের ক্ষেত্রেঃ
যদি আপনার শিশুর বয়স ৪৫ দিন থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন করতে যা যা প্রয়োজন সেগুলো হলোঃ টিকা কার্ড-এর ফটোকপি, হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি, যদি পিতা-মাতা জীবিত থাকেন, তাহলে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং আবেদনকারীর (শিশুর) ১টি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
বয়স ৫ বছরের বেশি হলেঃ
যদি বাচ্চার বয়স ৫ বছর বা তার বেশি হয় তাহলে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, অর্থাৎ PSC/JSC/SSC অনুরূপ পরীক্ষার সার্টিফিকেটের ফটোকপি, হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি, যদি পিতা-মাতা জীবিত থাকেন, তাহলে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং আবেদনকারীর ১টি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
জন্ম নিবন্ধন ফি এর তালিকা জেনে নিনঃ
- যদি আপনার শিশুর বয়স ১ বছর হয় তাহলে ১০ টাকা হারে ফি নেওয়া হবে।
- যদি আপনার বাচ্চার বয়স ২ বছর হয় তাহলে জন্ম নিবন্ধন ফি ২০ টাকা নেওয়া হবে।
- এছাড়া যদি আপনার বাচ্চার বয়স ৫ বছর হয় তাহলে জন্ম নিবন্ধন ফি ৫০ টাকা নেওয়া হবে।
- এছাড়া আবেদনকারীর বয়স যদি ১০ বছর হয় তাহলে জন্ম নিবন্ধন ফি ১০০ টাকা নেওয়া হবে
লেখকের শেষ কথা | নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন
(আসসালামু আলাইকুম) প্রিয় পাঠক সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ে আশা করি নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন কীভাবে? এবং বড়দের জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে এই সম্পর্কে আশা করি সঠিকভাবে জানতে পেরেছেন। আপনারা যদি আর্টিকেলটি পড়ে একটুও উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে অবশ্যই আপনারা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এই আর্টিকেলটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলে আপনার বন্ধুরা সহ আরও অনেকেই জানতে পারবে।
তাই আর দেরি না করে আপনার বন্ধুদের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করুন। এই রকম আরো আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার কোনো মতামত জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে সেটা জানিয়ে যাবেন। (ধন্যবাদ)
এখানে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url